আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসী ভোটকে ঘিরে নতুন করে আলোচনায় এসেছে মালয়েশিয়ায় দেশীয় রাজনৈতিক অঙ্গন। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার ও পোস্টাল ভোটে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করতে মালয়েশিয়া বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মালয়েশিয়া শাখার তৎপরতা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা–কল্পনা।
সম্প্রতি ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে শিবিরের সক্রিয় ভূমিকার পর প্রবাসেও সাংগঠনিক দক্ষতা ও সুশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচনায় এসেছে জামায়াত। আদর্শভিত্তিক কার্যক্রম, জবাবদিহিমূলক রাজনীতি এবং কর্মীদের একনিষ্ঠ অংশগ্রহণ সংগঠনটিকে মালয়েশিয়ায়ও শক্ত অবস্থানে রেখেছে বলে দাবি করছেন দলটির নেতারা।
অন্যদিকে, একসময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী সংগঠন ছিল মালয়েশিয়া বিএনপি। নব্বইয়ের দশকে শুরু হওয়া এ সংগঠনটি বর্তমানে বিভক্ত একাধিক গ্রুপে। দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, নেতৃত্ব সংকট এবং এমপিমুখী রাজনীতি সাংগঠনিক তৎপরতায় স্থবিরতা তৈরি করেছে।
মালয়েশিয়ায় যুবদল প্রায় আট বছর ধরে নেতৃত্বহীন। শ্রমিক দল ও স্বেচ্ছাসেবক দল কার্যত নিষ্ক্রিয়। অভিযোগ রয়েছে, সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব থেকে পুলিশ ও ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে হয়রানি এবং ভাড়া করা লোক দিয়ে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
মালয়েশিয়া বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক কাজি সালাহ উদ্দিন সরাসরি স্বীকার করেছেন সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা। তিনি বলেন, আমাদের সাধারণ কর্মীরা সচেতন না। ভোটের গুরুত্ব বুঝাতে হাইকমান্ডকে এগিয়ে আসতে হবে, নইলে প্রবাসী ভোটে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
একইভাবে সহ-সভাপতি তালহা মাহমুদ অভিযোগ করেছেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনয়নকেন্দ্রিক ব্যস্ততায় সাংগঠনিক কার্যক্রম উপেক্ষা করছেন। এই সংকট নিরসনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
বাদলুর রহমান খান টাঙ্গাইল-২ আসনে, আর সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন চাঁদপুর-২ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে ব্যস্ত। ফলে প্রবাসী সংগঠনে নেতৃত্বের শূন্যতা দেখা দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে বাদলুর রহমানের সমর্থকরা বলছেন, বিদেশে রাজনৈতিক দল পরিচালনা আইনের মধ্যে পড়ে না। তাই যেটুকু করা সম্ভব আমরা করছি। মালয়েশিয়া বিএনপি সবচেয়ে সুসংগঠিত। মনোনয়নের ব্যস্ততা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলছে না।
জামায়াতে ইসলামী মালয়েশিয়া শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এনামুল হক জানিয়েছেন, প্রবাসীরা ভোটাধিকার প্রয়োগে আগ্রহী ও সচেতন। প্রশাসনিক সহযোগিতা পেলে তারা উৎসাহের সঙ্গে ভোট দেবেন এবং দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ প্রবাসীর বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। বিএনপির বিভক্তি, নেতৃত্ব সংকট ও সাংগঠনিক দুর্বলতা যদি কাটানো না যায়, তবে সংগঠিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জামায়াত পোস্টাল ভোটে এগিয়ে যেতে পারে।
মন্তব্য করুন