রংপুরের পীরগাছাসহ কয়েকটি এলাকায় হঠাৎ করেই বিরল একটি রোগের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে এ রোগে বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রতিদিনই নতুন করে আক্রান্ত ব্যক্তিরা হাসপাতালে ভিড় করছেন। একই উপসর্গ নিয়ে অনেক গবাদি পশু মারা যাওয়ায় ‘অ্যানথ্রাক্স’ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার খামারিদের মাঝে।
পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই ১০ থেকে ১২ জন রোগী এই বিরল রোগের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসছেন। অনেক সময় একই পরিবারের সব সদস্যও আক্রান্ত হচ্ছেন। এখনো পরীক্ষাগারে নিশ্চিতভাবে রোগ নির্ণয় না হলেও অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গের সঙ্গে এ সংক্রমণের মিল পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুরের পীরগাছার সদর, তাম্বুলপুর, ছাওলা, পারুল, ইটাকুমারী ইউনিয়নের প্রায় ১০ থেকে ১২টি গ্রামের গবাদি পশু ও মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে সদর, ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম।
এদিকে গবাদি পশুর খামারিরা আশঙ্কা করছেন অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বলছেন— সময়মতো ভ্যাকসিন না আসায় এবং রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকায় বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অ্যানথ্রাক্স গরু, ছাগল, মহিষ— এই ধরনের প্রাণীর মধ্যে প্রথম দেখা যায় এবং আক্রান্ত পশু থেকে মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়তে পারে। মূলত দুই ধরনের অ্যানথ্রাক্স হলেও বাংলাদেশে যে অ্যানথ্রাক্স দেখা যায়, তা শরীরের বাইরের অংশে সংক্রমণ ঘটায়। এ ধরনের অ্যানথ্রাক্সে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোঁড়া বা গোটা হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার আঁখি সরকার জানান, প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী আসছেন। আক্রান্তদের কারো হাতে, গায়ে ক্ষতচিহ্ন দেখা দিচ্ছে। উপসর্গ দেখে মনে হচ্ছে, এটি অ্যানথ্রাক্স হতে পারে। এ অবস্থায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা এবং সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
পীরগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. একরামুল হক মণ্ডল বলেন, পীরগাছায় এ সমস্যাটি বেশি দেখা দিয়েছে; আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। গত চার মাস ধরে ভ্যাকসিন ছিল না। যার কারণে গরু-ছাগলকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়নি। গত মঙ্গলবার ভ্যাকসিন এসেছে এবং তা প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা বলেন, এই রোগের বিষয়টি অবহিত হয়েছি। ইতিমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকরা তাদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, যথাযথ চিকিৎসা নিলেই সুস্থ হওয়া সম্ভব রয়েছে।
মন্তব্য করুন