চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হলো যুক্তরাষ্ট্রে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মানবদেহে শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। প্রতিস্থাপনের পর ফুসফুসটি ৯ দিন কার্যকর থেকেছে।
নিউইয়র্ক সিটির এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন ট্রান্সপ্লান্ট ইনস্টিটিউটে এই অপারেশন সম্পন্ন হয়। ব্যবহৃত ফুসফুসটি ছিল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া একটি শূকরের। তবে এটি প্রতিস্থাপন করা হয় একজন ব্রেইন-ডেড রোগীর দেহে।
মানবদেহে পশু-পাখির অঙ্গ প্রতিস্থাপনকে বলা হয় জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশন। এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন ট্রান্সপ্লান্ট ইনস্টিটিউটের সার্জন ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জাস্টিন চ্যান ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমরা কয়েকজন ব্রেইন-ডেড রোগীর দেহে জেনেটিকভাবে পরিবর্তিত (জিএম) শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করেছি। তাদের মধ্যে একজনের দেহে এই ফুসফুস ১০ দিন সক্রিয় ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, এসব ফুসফুস স্বাধীনভাবে মানবদেহে দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে না। যদিও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি, তবে এটি ছিল আশাব্যঞ্জক এবং উল্লেখযোগ্য একটি পদক্ষেপ।’
যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুসফুস প্রতিস্থাপন ও শ্বাসতন্ত্র বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ফিশারও এ মতের সঙ্গে একমত। তিনি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, পৃথিবীতে হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃত ও কিডনি অকার্যকারিতায় ভোগা রোগীদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ পান। এর প্রধান কারণ হলো উপযুক্ত অঙ্গের বিরলতা।’
তার মতে, জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশন এই রোগীদের জন্য নতুন আশার আলো। যদিও এখনো এটি প্রাথমিক পর্যায়ে, তবে অগ্রগতি ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান। এনওয়াইইউ হাসপাতালের সাম্প্রতিক অপারেশন জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশনের ক্ষেত্রে এক বড় অগ্রগতি এবং এটি গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকে আরও ত্বরান্বিত করবে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরীক্ষামূলকভাবে পশু-পাখির অঙ্গ মানবদেহে প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্রেইন-ডেড রোগীদের বেছে নেওয়া হলেও কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর অসুস্থ ও মরণাপন্ন রোগীরাও স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছেন।
তবে এখনো পর্যন্ত এসব প্রতিস্থাপন দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য পায়নি। কয়েক ঘণ্টা থেকে শুরু করে কয়েক মাসের মধ্যেই অঙ্গগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে অ্যান্ড্রু ফিশার আরও বলেন, ‘ফুসফুস একদিকে যেমন শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে, তেমনি এটি রোগজীবাণু প্রবেশের প্রধান পথও। আবার প্রবেশ করা জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধও করে ফুসফুস। ফলে এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গ।’
তিনি যোগ করেন, ‘মানবদেহে অন্য প্রাণীর ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হলে শরীর অনেক সময়েই নতুন অঙ্গকে গ্রহণ করতে পারে না। এটিই জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
মন্তব্য করুন