আজ ২৭ আগস্ট, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা ১৩৮৩ সালের ১২ ভাদ্র এই দিনে (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা সাহিত্যের এই কালজয়ী কবি। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
কাজী নজরুল ইসলাম শুধু একজন কবি নন, ছিলেন একজন বিদ্রোহী চিন্তাবিদ, যিনি তার লেখনী দিয়ে যুগের মুখপাত্র হয়ে উঠেছিলেন। প্রেম, দ্রোহ, মানবতা, সাম্য ও মুক্তির বার্তা তার কবিতা ও গানে বারবার উঠে এসেছে।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, দোয়া মাহফিল, আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাকে স্মরণ করা হচ্ছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠন দিনটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। শৈশবে ‘দুখু মিয়া’ নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। তার পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ এবং মায়ের নাম জাহেদা খাতুন।
ছোটবেলা থেকেই জীবনের নানা দুঃখ-কষ্ট তাকে কঠোর বাস্তবতার সঙ্গে পরিচিত করায়, যা পরবর্তীতে তার লেখনীতে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে প্রকাশ পায়। তিনি শুধু কবিতায় নয়, গান, নাটক, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, সাংবাদিকতা, এমনকি চলচ্চিত্রেও রেখেছেন নিজের স্বকীয় স্বাক্ষর।
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান দীর্ঘকাল ধরে মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। উপমহাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাসে তিনিই ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। ধর্ম, বর্ণ, জাতপাতের ঊর্ধ্বে মানবতার জয়গানই ছিল তার ভাবনার মূলসুর।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নজরুলের গান ও কবিতা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তার সৃষ্টিতে ছিল শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামী আহ্বান।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। সেই দিন থেকেই তাকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধি দেয়। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে দেওয়া হয় একুশে পদক।
কাজী নজরুল ইসলাম শুধু একটি সময়ের কবি নন, তিনি চিরকালীন। তার লেখা আজও প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে যখন জাতি নতুন করে সাম্য, মানবতা ও ন্যায়ের পথে চলার আহ্বান খোঁজে। নতুন প্রজন্মের কাছে নজরুল হতে পারেন অনুপ্রেরণা, প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর এবং ভালোবাসার পথপ্রদর্শক।
আজকের এই দিনে জাতীয় কবিকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে পুরো জাতি। তার জীবনের সংগ্রাম ও সাহিত্য আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়—‘আমি চির বিদ্রোহী বীর।’
মন্তব্য করুন