এ যেন এক অবর্ণনীয় মানবিক সংকট। বাড়িতে নেই এক মুঠো তরকারিও। সন্তানদের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে পাশের খেত থেকে কচুর ফুল তুলে এনে সকালে পরিবারের জন্য খাবার রান্না করেন স্বপ্না বেগম। রান্না শেষে যখন ছেলেরা খেতে বসে, তখনো মনে ঘুরপাক খায় অনিশ্চয়তার প্রশ্ন—পরের বেলা কী খাবে তারা?
এ দৃশ্য কোনো কল্পকাহিনি নয়, বাস্তব ঘটনা। রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম আজ জীবন-মরণের চরম লড়াইয়ে। সাত সন্তানের মধ্যে দুইজন মারা গেছেন। বাকি সন্তানদের মুখে নিয়মিত খাবার তুলে দিতে পারছেন না তারা।
রফিকুল ইসলাম দিনমজুরের কাজ করেন। স্ত্রী স্বপ্না বেগমও অসুস্থ হলেও সংসারের ভার তিনিই সামলান। কখনো খেত থেকে কচু বা শাকসবজি তুলে আনেন, কখনো নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেন।
জীবিকার তাগিদে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই ছেলে আবু সায়েমকে ঢাকায় কাজ করতে পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন তারা। পড়াশোনা নয় শৈশবেই সংসারের বোঝা কাঁধে তুলে নিয়েছে সায়েম।
রফিকুল-স্বপ্না দম্পতি থাকেন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের হাটিথানা পুটিমারী এলাকায়, বাঁধের পাশে একটি ছোট ঘরে।
স্থানীয়রা জানান, পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সন্তানদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার জোটে না। রফিকুল বাইরে কাজে গেলে একাই সন্তানদের দেখাশোনা করতে হয় স্বপ্নাকে। কষ্টে-সৃষ্টে দিনমজুরির কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান তারা। এলাকাবাসী মাঝেমধ্যে সহায়তা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
রফিকুল ইসলাম বলেন, “ছেলে-মেয়েদের ঠিকমতো ভরনপোষণ দিতে পারি না। বাধ্য হয়ে ১৩ বছরের ছেলেকে ঢাকায় সাইটে কাজ করতে পাঠিয়েছি। তারপরও জমজ সন্তানসহ চার সন্তানের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি।”
অসহায় স্বপ্না বেগম বলেন, “স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারও সহযোগিতা করেন না। খুব কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছি। সকালে রান্না করার মতো কিছুই ছিল না। কি করমু পরে রাস্তার ধারে কচুর ফুল তুলে এনে ডাল রান্না করেছি। কি করব, বাচ্চাদের তো খাওয়াতেই হবে।”
মন্তব্য করুন