উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের সংখ্যা কম দেখানোর কোনো কারণ সরকারের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বুধবার (২৩ জুলাই) ফেসবুক দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা জানান।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা পরবর্তী পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হচ্ছে। সামরিক বাহিনীও এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করছে। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, হতাহতের সংখ্যা কম করে দেখানোর কোনো কারণ সরকারের নেই।’
তিনি লিখেছেন, ‘‘গতকাল আমরা মাইলস্টোন কলেজ পরিদর্শন করেছি, শোকাহত পরিবার এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সাথেও দেখা করেছি, যারা এখনো এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় শোকাহত, স্তব্ধ। সেখানকার পরিবেশ ছিল শোক ও ক্ষোভে ভারাক্রান্ত। অনেক শিক্ষার্থী সরাসরি তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের জানিয়েছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে অসঙ্গতির জন্য হতাশা প্রকাশ করেছে।’
প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘সাংবাদিক হিসেবে আমি ২০০২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অসংখ্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা-দুর্যোগের ঘটনায় রিপোর্ট লিখেছি। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, বাংলাদেশে হতাহতের সংখ্যা গোপন করা কার্যত অসম্ভব। প্রাথমিকভাবে, কেউ নিখোঁজ থাকলে পরিবারগুলো সেটা রিপোর্ট করে। হাসপাতাল ও কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য জানায় এবং সেখান থেকে তারা তাদের প্রিয়জনদের খুঁজে পায়। এই ঘটনায় মাইলস্টোন কলেজ নিখোঁজদের শনাক্ত করার জন্য সেদিনের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির রেকর্ড ক্রস-রেফারেন্স করতে পারে।’
তিনি লিখেছেন, ‘স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য দুজন উপদেষ্টা স্কুল কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পাসে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। কন্ট্রোল রুম থেকে স্কুলের রেজিস্ট্রির তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে আহত এবং নিহতের সংখ্যা সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, উপদেষ্টারা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কার্যক্রমে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছেন। আমরা আশা করছি, কন্ট্রোল রুমটি আজ থেকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হবে।’
মঙ্গলবার মাইলস্টোন স্কুলে অবরুদ্ধ হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘গতকাল আমরা স্কুলে নয় ঘণ্টা কাটিয়েছি। যদিও আমরা আরও আগে চলে আসতে পারতাম, কিন্তু উপদেষ্টারা বলপ্রয়োগ ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি সমাধান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তারা যত সময়ই প্রয়োজন হোক না কেন সেখানে অবস্থান করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। আমরা পরিস্থিতি শান্ত ও শৃঙ্খল হওয়ার পরই সেখান থেকে বের হয়েছি।’
প্রেস সচিব আরও লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থী ও শিক্ষক যারা এ নির্মম দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মৃত্যুতে আমরা শোক জানাই। এটি একটি ন্যাশনাল ট্র্যাজেডি এবং তারা সকলেই শহীদ। আমরা ভবিষ্যতে এ ধরনের ট্র্যাজেডি প্রতিরোধে আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করতে সকলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানাই। সরকার জাতীয় নিরাপত্তা উন্নত করতে এবং বিমান-সম্পর্কিত দুর্যোগ শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এর আগে সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধ বিমান উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ক্লাস রুমের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এতে এখন পর্যন্ত ৩২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। এছাড়া আহতাবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি অনেকে।
তবে সরকার মৃতদেহের সংখ্যা গোপন করছে বলে গতকাল থেকেই অভিযোগ নানা মহলে। এমনকি শিক্ষার্থীরাও এমন অভিযোগ তুলেছে। ওই অভিযোগ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমজুড়ে আজও আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে।
মন্তব্য করুন