কিছু মৃত্যু দুনিয়াবাসীকে কষ্ট দেয়। কিছু ক্ষতবিক্ষত লাশ তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ মানবজাতির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়। সে চিত্র তাদের আমৃত্যু পীড়া দেয়। কিন্তু সে লাশের ভেতর থাকা পবিত্র আত্মাগুলো জান্নাতের সবুজ পাখিতে স্থানান্তরিত হয়।
তারা জান্নাতে সবুজ পাখি হয়ে উড়ে বেড়ায়। জান্নাতের নির্মল ঝরনা ওপর দিয়ে উড়ে বেড়ায়। জান্নাতের সুস্বাদু ফলমূল থেকে তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করা হয়। আরশে ঝোলানো সোনার ফানুসে তাদের বাসস্থান হয়।
এভাবে তারা অমর হয়ে মহান আল্লাহর অগণিত নিয়ামত ভোগ করে।
প্রশ্ন হলো, তারা কারা, যারা দুনিয়াবাসীর চোখে মৃত হলেও মূলত জীবিত। মহান আল্লাহ তাদের নিজের আরশের কাছেই রাখেন। রিজিক দান করে।
যাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন যে তারা মৃত নয়, বরং জীবিত! পবিত্র কোরআন-হাদিসে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বোলো না, বরং তারা জীবিত কিন্তু তোমরা বোঝো না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৪)
পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেওয়া ব্যক্তিদের বিশেষ মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যেক মৃত ব্যক্তিই কবরে বিশেষ ধরনের জীবন প্রাপ্ত হয় এবং সে জীবনে তারা কবরের আজাব বা সওয়াব ভোগ করে থাকে। তবে সে জীবনের হাল-হাকিকত দুনিয়াবাসীর জন্য পুরোপুরি স্পষ্ট করা হয়নি।
তবে যেসব লোক আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়, তাদের মৃত্যুকে অন্যদের মৃত্যুর সমপর্যায়ভুক্ত মনে করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা আখিরাত সফরের এই অধ্যায় অন্যান্য মৃতের তুলনায় ভিন্ন ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। হাদিস শরিফে তাদের সে জীবনের কিছু চিত্রের ধারণা পাওয়া যায়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ওহুদ যুদ্ধের দিন যখন তোমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়, মহান আল্লাহ তাদের রুহগুলোকে সবুজ রঙের পাখির মধ্যে স্থাপন করলেন। তারা জান্নাতের ঝরনাগুলোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে, সেখানকার ফলমূল খায় এবং আরশের ছায়ায় ঝোলানো সোনার ফানুসে বসবাস করে। তারা যখন নিজেদের মনঃপূত খাবার, পানীয় ও বাসস্থান পেল, তখন বলল, কে আমাদের এ সংবাদ আমাদের ভাইদের নিকট পৌঁছে দেবে, আমরা জান্নাতে জীবিত আছি, এখানে আমাদেরকে নিয়মিত রিজিক দেওয়া হচ্ছে! (এটা জানতে পারলে) তারা জিহাদে অমনোযোগী হবে না এবং যুদ্ধের ব্যাপারে অলসতা করবে না। অতঃপর মহান আল্লাহ বলেন, আমি তাদের কাছে তোমাদের এ সংবাদ পৌঁছে দেব। বর্ণনাকারী বলেন, মহান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন—‘যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তোমরা তাদেরকে মৃত মনে কোরো না। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত, তারা তাদের রবের নিকট থেকে নিয়মিত রিজিক পাচ্ছে।’ [সুরা : আলে ইমরান,
আয়াত : ১৬৯], (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫২০)
উপরোক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, মূলত আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত বরণকারী ব্যক্তিরাই জান্নাতের সবুজ পাখি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে। তারা সেখানে জীবিত থাকে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নিয়ামত ভোগ করে।
তবে আরো কিছু মৃত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ শাহাদাতের মর্যাদা দেবেন বলে হাদিস শরিফে পাওয়া যায়। জাবির ইবনে আতিক (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, আচ্ছা, তোমরা শাহাদাত কাকে মনে করো? তাঁরা বললেন, আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করা ব্যতীতও আরো সাত প্রকারের শাহাদাত আছে—১। প্লেগ রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ, ২। পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, ৩। পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, ৪। প্রাচীর বা ঘর চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, ৫। অভ্যন্তরীণ বিষফোড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, ৬। অগ্নিদগ্ধে মৃত ব্যক্তি শহীদ, ৭। প্রসবকালে মৃত রমণী শহীদ। (নাসায়ি, হাদিস : ১৮৪৬)
তাই আমরা দোয়া করি, মহান আল্লাহ উত্তরা ট্র্যাজেডিতে নিহত কোমলমতি শিশু ও অন্যদের শাহাদাতের মর্যাদা দিন এবং জান্নাতের সবুজ পাখি হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
মন্তব্য করুন