ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকীতে আজ ‘জুলাই শহীদ দিবস’ পালন করছে রংপুরবাসী। দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে সর্বস্তরের অংশগ্রহণে।
দিবসের শুরুতে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. শওকাত আলী বলেন, “আবু সাঈদের আত্মত্যাগ বিশ্ববিদ্যালয় কোনোদিন ভুলে যাবে না। তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।” তিনি শহীদ হত্যার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন।
শহীদ আবু সাঈদের পিতা মকবুল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার সন্তানের আত্মত্যাগের বিচার এবং তার সম্মানার্থে এই দিবসের স্বীকৃতি কাম্য ছিল।”
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে কালো ব্যাজ ধারণ করে একটি শোক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১০টায় শহীদ আবু সাঈদের নামে একটি তোরণ ও মিউজিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং তার নিহতস্থলে ‘আবু সাঈদ চত্বর’ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং বাদ আসর কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
‘জুলাই শহীদ দিবস’ শুধু রংপুর নয়, গোটা দেশের প্রগতিশীল চেতনাকে স্মরণ করিয়ে দেয় – অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদের এক অনন্য নজির হয়ে থাকবেন শহীদ আবু সাঈদ।
মন্তব্য করুন