মা একটি শব্দ, এক মহৎ অনুভব। সন্তানের জীবনের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান যদি কারও হয়, তবে তা মা। শুধু জন্ম দেওয়া নয়, সন্তানকে সুপথে পরিচালিত করা, তার জন্য দোয়া করা এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তাকে আগলে রাখা—এসবই একজন মায়ের দায়িত্ব ও ভালোবাসার নিদর্শন।
ইসলামে মায়ের দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মায়ের দোয়া সন্তানের জীবনে অনেক বড় কাজ করে। ইতিহাসে দেখা যায়, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও ইমাম বুখারি (রহ.)-এর মতো মনীষীদের ঈমান, ইলম ও জীবনগঠনে তাঁদের মায়ের দোয়ার অসাধারণ ভূমিকা ছিল।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তিনটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়, এতে কোনো সন্দেহ নাই। ১. মজলুম বা নির্যাতিতের দোয়া, ২. মুসাফিরের দোয়া এবং ৩. সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া। (আদাবুল মুফরাদ: ৩২)
তাই সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়ার বিকল্প হয় না। তাদের জন্য কল্যাণকর দোয়া করা মা-বাবার প্রতিদিনের দায়িত্ব। সন্তানের কল্যাণে যেকোনো দোয়া করা যায়। তবে পবিত্র কোরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো অনেক কার্যকরী ও বরকতময়। এখানে কোরআন হাদিসে বর্ণিত কিছু দোয়া তুলে ধরা হলো।
আদর্শ, সৎ-নিষ্ঠাবান ও উত্তম সন্তানের প্রত্যাশা সবার থাকে। মা-বাবার উচিত এমন সন্তান চেয়ে এই দোয়া করা- رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ উচ্চারণ: রব্বি হাবলি মিনাস সলিহিন। অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নেককার সন্তান দিন। (সুরা সফফাত: ১০০)
মা-বাবা সন্তানের নিরাপত্তার জন্য দোয়া করবে। পাশাপাশি সন্তান যে দেশে বসবাস করে, সে দেশের নিরাপত্তা কামনা করেও দোয়া করবে। যেমনটি ইবরাহিম (আ.) করেছিলেন। তিনি সন্তানের জন্য যে দোয়া করেছিলেন তা পবিত্র কোরআনে তুলে ধরা হয়েছে। দোয়াটি হলো- رَبِّ اجۡعَلۡ هٰذَا الۡبَلَدَ اٰمِنًا وَّ اجۡنُبۡنِیۡ وَ بَنِیَّ اَنۡ نَّعۡبُدَ الۡاَصۡنَامَ উচ্চারণ: ‘রব্বিজআল হাজাল বালাদা আমিনাও ওয়াজনুবনি ওয়া বানিয়্যা আন না’বুদাল আসনাম।’ অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা! এ নগরকে নিরাপদ-শান্তিময় করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদের মূর্তি-প্রতিমা পূজা থেকে দূরে রাখুন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৩৫)
সন্তানের উত্তম জীবিকার জন্য মা-বাবা এই দোয়া করবেন- اللهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ،وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহু লাতিফুম বি-ইদিহি ইয়ারজুকু মাই ইয়াশায়ু ওয়া হুয়াল ক্ববিউল আজিজ।’ অর্থ: ‘আল্লাহ নিজ বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ, যাকে ইচ্ছা তিনি রিজিক দেন, তিনি শক্তিশালী, পরাক্রান্ত।’ (সুরা আশশুরা: ১৯)
শয়তানের প্ররোচনা, মানুষের কুদৃষ্টি ও সব ধরনের অনিষ্ট থেকে সন্তানকে রক্ষা করতে মা-বাবা এই দোয়া করবেন—أعوذ بكلمات الله التامة من كل شيطان وهامة ومن كل عين لامة উচ্চারণ: ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়তানিঁও ওয়া হাম্মাহ; ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মা।’ অর্থ: ‘আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালেমাগুলোর মাধ্যমে প্রত্যেক শয়তান ও বিষাক্ত প্রাণী থেকে এবং সর্বপ্রকার কুদৃষ্টি থেকে মুক্তি কামনা করছি।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৪৭৩৭)
সন্তান যেন দ্বীনদার হয় সেজন্য পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এই দোয়াটি করুন- رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلاَةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاء উচ্চারণ: ‘রাব্বিজ আলনি মুকিমাস সালাতি ওয়ামিন জুররিয়্যাতি, রাব্বানা ওয়া তাকাব্বাল দুয়া।’
অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামাজ আদায়কারী করুন এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও। হে আমার প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল করুন। (সুরা ইবরাহিম: ৪০)
সন্তান মায়ের হৃদয়ের টুকরো। তার জন্য মায়ের দোয়ার চেয়ে বড় কোনো আশ্রয় বা সহায় নেই। একজন মায়ের দোয়া সন্তানকে শুধু ভালো ফলাফলের পথে পরিচালিত করে না, বরং তা আল্লাহর বিশেষ রহমতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই যুগে, যখন সন্তানদের ঈমান, আদর্শ ও চরিত্র নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে, তখন দরকার সন্তানদের জন্য প্রতিদিন আল্লাহর দরবারে মায়ের চোখের পানি ও আন্তরিক দোয়া। এক মায়ের দোয়াই বদলে দিতে পারে একটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমাদের সন্তানের জন্য নেক দোয়া করার তাওফিক দান করুন এবং তাদের দুনিয়া-আখিরাতে সফল করুন। আমিন।
মন্তব্য করুন