ইহুদি ধর্ম বিশ্বের প্রাচীনতম একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাওরাত, তালমুদ এবং রাব্বাইনিক ব্যাখ্যার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই ধর্মের ইতিহাসে নানা উত্থান-পতন লক্ষণীয়। সময়ের প্রবাহে ধর্মীয় বিকৃতি, রাজনৈতিক সংঘাত এবং জাতিগত সংকট ইহুদি জাতিকে বারবার পরীক্ষার মুখে ফেলেছে।
ইহুদিরা নিজেদের “বনি ইসরাঈল” (ইসরাঈলের সন্তান) বলে পরিচয় দেয়, যা নবী ইয়াকুব (আ.)-এর অপর নাম “ইসরাঈল”-এর সাথে সম্পর্কিত। তাদের ধর্মীয় ইতিহাস শুরু হয় নবী ইবরাহিম (আ.)-এর মাধ্যমে, যিনি তাওহিদের (একত্ববাদের) প্রচার করেছিলেন। পরবর্তীতে ইসহাক (আ.), ইয়াকুব (আ.) এবং ইউসুফ (আ.)-এর মাধ্যমে এই ধারা অব্যাহত থাকে।
বনি ইসরাঈল দীর্ঘকাল মিসরে দাসত্বের শিকার ছিল। নবী মুসা (আ.)-এর নেতৃত্বে তারা ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি পায় এবং তাওরাত লাভ করে। সিনাই প্রান্তরে ৪০ বছর পরিভ্রমণের পর ইয়াশুয়া (আ.)-এর নেতৃত্বে তারা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে।
প্রায় ৩০০ বছর ধরে ইসরাঈলিরা বিচারকদের (যেমন শামুয়েল) মাধ্যমে শাসিত হয়। পরে তারা রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। প্রথম রাজা তালুত (শাওল), তারপর দাউদ (আ.) এবং সুলাইমান (আ.)-এর শাসনামলে ইসরাঈলিরা স্বর্ণযুগ অর্জন করে। সুলাইমান (আ.)-এর মৃত্যুর পর রাজ্য উত্তর (ইসরায়েল) ও দক্ষিণ (ইয়াহুদা) অংশে বিভক্ত হয়ে যায়।
অনৈতিকতা ও আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনের কারণে ইসরায়েল রাজ্য ৭২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অ্যাসিরীয়দের হাতে ধ্বংস হয় এবং ১০টি গোত্র চিরতরে বিলুপ্ত হয়। ইয়াহুদা রাজ্য ৫৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলনীয়দের হাতে পতিত হয়, এবং ইহুদিরা ব্যাবিলনে নির্বাসিত হয়। ৭০ বছর পর পারস্য সম্রাট সাইরাস তাদের ফিরে আসার অনুমতি দেন।
গ্রিকদের অধীনে ইহুদিরা হেলেনিস্টিক সংস্কৃতির মুখোমুখি হয়। রোমানরা ৭০ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম ধ্বংস করে এবং ইহুদিদের বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয় (ডায়াস্পোরা)। মধ্যযুগে ইউরোপে ইহুদিরা নানা নির্যাতনের শিকার হয়।
মুসলিম শাসনামলে (বিশেষত স্পেন ও অটোমান সাম্রাজ্যে) ইহুদিরা অপেক্ষাকৃত সুযোগ-সুবিধা পায়। কিন্তু ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফিলিস্তিনিদের সাথে তাদের সংঘাত চলমান।
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের সমাপ্তির পর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সূচনা করে। আজও ফিলিস্তিনি ভূমি দখল ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে রয়েছে।
ইহুদি জাতির ইতিহাস ধর্মীয় বিশ্বাস, রাজনৈতিক সংঘাত এবং জাতিগত টিকে থাকার এক জটিল কাহিনি। তাদের অতীত গৌরব ও বর্তমান সংকট বিশ্ব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
মন্তব্য করুন