প্যারিস সেইন্ট-জার্মেই (পিএসজি) অবশেষে স্বপ্ন পূরণ করল! শনিবার রাতে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে তারা নিজেদের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে নিল। ১৯৫৬ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রতিযোগিতার ইতিহাসে ফাইনালে এত বড় জয়ের নজির আর নেই। এই জয়ে পিএসজি এবার ট্রেবল জিতল, লিগ ওয়ান, কুপ দ্য ফ্রঁস এর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ- সবই এক মৌসুমে।
ম্যাচের ১২ মিনিটেই নিজের সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোল করে দলকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন আশরাফ হাকিমি। এরপর ১৯ বছরের ফরোয়ার্ড দেজিরে দোয়ে দুটি দারুণ গোল করে ফেলেন। তিনি হয়ে গেলেন ১৯৬২ সালের পর প্রথম তরুণ ফুটবলার যিনি ফাইনালে দুটো গোল করেছেন। সেই ম্যাচে বেনফিকার ইউসেবিও রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৫-৩ জয়ে করেছিলেন এমন কীর্তি। শেষদিকে খভিচা খারাতখেলিয়া আর বদলি হিসেবে নামা সানি মাইউলু ম্যাচের শেষ পেরেক ঠুকে দেন ইন্টারের কফিনে।
কাতারি মালিকানাধীন পিএসজি বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের সেরা তারকাদের দলে টেনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার চেষ্টা করেছে। মেসি, নেইমার, ইব্রাহিমোভিচ, এমবাপের মত তারকাদের দলে ভিড়িয়েছে ইউরোপ সেরার ট্রফি ঘরে তুলতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থই হয়েছে দলটি। অবশেষে দুই বছর আগে সেই নীতি ছেড়ে তারা তরুণ প্রতিভা গড়ার দিকে মন দেয়। আর মজার ব্যাপার হলো, এমবাপে ছাড়া প্রথম মৌসুমেই তারা ইউরোপ সেরার মুকুট জিতল! এমবাপে গত গ্রীষ্মেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার স্বপ্ন নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদে চলে গিয়েছিলেন।
এবার পিএসজি হয়ে গেল মাত্র দ্বিতীয় ফরাসি ক্লাব, যারা ইউরোপিয়ান কাপ জিতল। এর আগে ১৯৯৩ সালে মার্সেই এই কীর্তি গড়েছিল। আর বার্সেলোনাকে ২০১৫ সালে শিরোপা জেতানোর পর কোচ লুইস এনরিকে নিজের দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে দেখলেন।
হাকিমি ম্যাচ শেষে বললেন, “আমরা ইতিহাস গড়েছি, আমাদের নাম পিএসজির ইতিহাসে লেখা হয়ে গেল। অনেক দিন ধরে এই ক্লাবটা এর যোগ্য ছিল। আমরা একসাথে দারুণ একটা পরিবার তৈরি করেছি। লুইস এনরিকে সবকিছু বদলে দিয়েছেন। তিনি সৎ মানুষ, সবচেয়ে বেশি তাঁরই প্রাপ্য এই সাফল্য।”
বায়ার্ন মিউনিখের ঘরের মাঠ অ্যালিয়ান্জ এরিনা, ইউরোপের সবচেয়ে বড় মঞ্চগুলোর একটিতে পিএসজি নিজেদের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতল। ২০২০ সালে ঠিক এই বায়ার্নের কাছেই ফাইনালে হেরে কেঁদেছিলেন নেইমাররা। সেদিন ছিল ফাঁকা গ্যালারি, করোনার কারণে দর্শক ঢোকেনি। এবার হাজার হাজার পিএসজি সমর্থক স্টেডিয়াম ভরিয়ে রেখেছিলেন। পতাকা, ফ্লেয়ার, চিৎকার- সবকিছুর রঙে ইন্টারের সমর্থকদের হারিয়ে দিয়েছিল পিএসজির জনস্রোত।
মারকিনহোস বললেন, “এটা আনন্দ আর আবেগের মিশ্রণ। আমি ভুগেছি, কিন্তু এই দলটার সাথে বড় হয়েছি। ভাবছি, কত কিংবদন্তি খেলোয়াড় এখানে এসেছেন, কিন্তু পারেননি। আমার আইডল থিয়াগো সিলভা, লুকাস, ইব্রা, কাভানি, ডি মারিয়া- তাদের সবার কথা মনে পড়ছে। আমরা এটা ঘরে তুলছি, সারা পৃথিবীর সমর্থকদের জন্য। এটাই আমার জীবনের সেরা দিন।”
ম্যাচের গোলগুলোর কথায় আসি। ২০১৯ সালের পর সবচেয়ে দ্রুততম ফাইনাল গোল এল ১২ মিনিটেই। ভিতিনিয়ার পাস থেকে দোয়ে গোল না করে বল বাড়িয়ে দেন হাকিমিকে, আর তিনি খালি জালে বল ঢুকিয়ে দেন। সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোল করলেও হাকিমির উদযাপন শান্ত ছিল, কিন্তু গ্যালারিতে পিএসজি সমর্থকরা যেন আগুন জ্বালিয়ে দিলেন।
আট মিনিট পরে ভাগ্যের ছোঁয়ায় বাড়ে পিএসজির লিড। দোয়ের শট ইন্টারের ডিফেন্ডার ফেদেরিকো দিমারকোর গায়ে লেগে গোলকিপার ইয়ান সমারের পেছনে ঢুকে যায়। ৬৩ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন দোয়ে, নিখুঁতভাবে বল গোলের নিচে জড়িয়ে দেন। ম্যাচ শেষে দোয়ে বললেন, “কিছু বলার নেই, এটা আমার জন্য অবিশ্বাস্য।”
এর দশ মিনিট পর খারাতখেলিয়া চতুর্থ গোল করেন। আর ৮৬ মিনিটে মাত্র দুই মিনিট আগে মাঠে নামা মাইউলু নিজের নামও স্কোরশিটে তুলে ফেলেন, আরেক কিশোর হিসেবে ফাইনালে গোল করার কীর্তি গড়ে।
৫-০ তে শেষ হওয়া এই জয় ইউরোপের শীর্ষ প্রতিযোগিতার ফাইনালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধান। এর আগে মিলানের (১৯৮৯, ১৯৯৪) ৪-০ জয় আর বায়ার্নের (১৯৭৪) একই ব্যবধানের জয় ছিল রেকর্ড। এবার পিএসজি সব ছাপিয়ে গেল।
মন্তব্য করুন