কাশ্মিরে সাম্প্রতিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সোমবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের নেতৃত্বে ইসলামাবাদে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি ও ভারতের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের কৌশল নির্ধারণ করা হয়।
সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, বৈঠকে আইন ও বিচারমন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল, জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা এবং কারিগরি বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিন্ধু নদীর পানির প্রবাহ, আন্তর্জাতিক আইন, কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য হুমকি নিয়ে আলোচনা হয়।
ভারতের সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তকে পাকিস্তান একটি “শাস্তিমূলক পদক্ষেপ” হিসেবে দেখছে। ইসলামাবাদ সাফ জানিয়েছে, তারা হামলার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছে এবং একটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, “সিন্ধু নদীর পানি পাকিস্তানের ২৪ কোটিরও বেশি মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই পানি আটকানো বা অন্যভাবে ব্যবহার করাকে আমরা সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার শামিল মনে করি।”
তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তান তার পানি অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের কূটনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ভারতের একতরফা সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের রীতি এবং চুক্তির বিধান লঙ্ঘন করেছে।”
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি অনুসারে তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী—সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাব—পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ, এবং তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদী—রাভি, বিয়াস ও শতদ্রু—ভারতের জন্য। চুক্তিটি অতীতে যুদ্ধকালেও বহাল ছিল।
চুক্তির ১২ নম্বর ধারা অনুযায়ী, এটি তখনই বাতিলযোগ্য, যখন দুই দেশ সম্মত হয়ে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করবে। আন্তর্জাতিক চুক্তির আইনি কাঠামো (বিশেষত ১৯৬৯ সালের ‘ভিয়েনা কনভেনশন অন দ্য ল’ অব ট্রিটিজ’) অনুসারে, কোনো দেশ একতরফাভাবে কোনো চুক্তি বাতিল করতে পারে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো প্রকল্প দরকার, যা তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব নয়। তাছাড়া, ভারতের এমন সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে চীনকে ব্রহ্মপুত্র নদ নিয়ে একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে, যা ভারতের জন্য একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিন্ধু চুক্তি স্থগিত হলে পাকিস্তানের পানিসুরক্ষা, কৃষি ও খাদ্য সরবরাহ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। ইসলামাবাদ জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এবং বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে আইনি ও কূটনৈতিক লড়াইয়ের পথে যেতে পারে।
পাকিস্তান জাতিসংঘ সনদের ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদের আওতায় বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে তুলতে পারে। এছাড়া, দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য নিম্ন অববাহিকার দেশগুলোর (যেমন: নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান) সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গড়ে তুলতে পারে।
পাকিস্তান ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে, সিন্ধু পানিচুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত হলে ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি, ১৯৪৯ সালের করাচি চুক্তি এবং বিভিন্ন আত্মবিশ্বাস তৈরির ব্যবস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে দুই দেশের মধ্যে কাঠামোবদ্ধ কূটনৈতিক সম্পর্ক ভেঙে পড়ার ঝুঁকি বাড়বে।
মন্তব্য করুন