ঘুম শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত জরুরি একটি প্রক্রিয়া। তবে ব্যস্ততা, জীবনযাত্রার ধরন ও বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে অনেকেরই ঘুম ঠিকমতো হয় না। রাতে ঘুম না হলে তার প্রভাব পড়ে পরদিনের কাজের ওপর। কেউ কেউ এই ঘাটতি পূরণ করতে দিনে ঘুমিয়ে নেন, আবার কেউ অভ্যাসবশত দিনের বেলাতেই নিয়মিত ঘুমান। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—দিনে ঘুমানো কি স্বাস্থ্যসম্মত? আদৌ কি এটা প্রয়োজনীয়? বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে ঘুমানো কখনো উপকারী, কখনো আবার ক্ষতিকরও হতে পারে, এটি নির্ভর করে সময় ও ঘুমের স্থায়িত্বের ওপর।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আদর্শ দিনের ঘুম বা ‘ন্যাপ’ হতে পারে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। এই স্বল্পমেয়াদী ঘুম মনোযোগ বৃদ্ধি, মানসিক প্রশান্তি এবং প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে সহায়তা করে। তবে এর চেয়ে বেশি সময় ঘুমালে গভীর ঘুমের স্তরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ফলে জেগে উঠার পর ঘুমঘুম ভাব লেগে থাকতে পারে, যা দিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
বিকেল ৪টার পর ঘুমানো উচিত নয়। এই সময়ের পর ঘুমালে শরীরের প্রাকৃতিক ঘুমচক্র বা সার্কাডিয়ান রিদম ব্যাহত হতে পারে, ফলে রাতে ঘুমাতে সমস্যা হয়। যারা ইনসোমনিয়ায় ভোগেন, তাদের জন্য এই বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। দিনের বেলায় ঘুমানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে দুপুর ১টা থেকে ৩টার মধ্যে, যখন শরীর স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা ক্লান্ত থাকে।
যদি কোনোদিন রাতে ঘুম না হয়, তবে দিনের বেলায় স্বল্প সময়ের একটি ঘুম সেই ঘাটতি কিছুটা পূরণ করতে পারে। তবে এটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করা ঠিক নয়। বরং রাতেই পর্যাপ্ত (৬–৮ ঘণ্টা) ঘুম নিশ্চিত করার চেষ্টা করা উচিত। ইনসোমনিয়া থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তা সমাধানের দিকে এগোনোই ভালো।
শুধু অলস সময় কাটানোর জন্য প্রতিদিন দিনের বেলায় ঘুমানো উচিত নয়। যদি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম পায় বা অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে তা শরীরের অন্য কোনো সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে—যেমন পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, মানসিক চাপ, আয়রনের ঘাটতি কিংবা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এসব লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
সুস্থ দেহ ও মন বজায় রাখতে প্রতিদিন ৬–৮ ঘণ্টার গুণগতমানসম্পন্ন ঘুম অপরিহার্য। ঘুমের সবচেয়ে ভালো সময় হলো রাত। তবে দিনের বেলায় যদি শারীরিক বা মানসিক ক্লান্তি অত্যধিক হয়, তবেই স্বল্প সময়ের বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে। অন্যথায় রাতের ঘুমকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
মন্তব্য করুন