চিকেন পক্স বা জলবসন্ত একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যার কারণ ভ্যারিসেলা-জোস্টার ভাইরাস (VZV)। এটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং সহজেই একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভাইরাসটি সংক্রমণ শুরু করে ফুসকুড়ি ওঠার আগেই—জ্বর আসার ২-৩ দিন আগে থেকেই এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায়। একবার আক্রান্ত হলে ভাইরাসটি শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায় এবং পরবর্তীকালে আবার সক্রিয় হতে পারে। তবে সাধারণত একবার সংক্রমণের পর দ্বিতীয়বার তীব্রভাবে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম।
চিকেন পক্সের বিস্তারের সময় ও কারণ
এই রোগ বছরে বিশেষ করে শীতকাল বা আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় বেশি দেখা যায়। স্কুল, অফিস বা জনাকীর্ণ জায়গায় ভাইরাসটি দ্রুত ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে বাতাসে মিশে যাওয়া ভাইরাস অন্যদের শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এমনকি ফোসকা শুকিয়ে যাওয়ার পরেও তা সংক্রামক থাকে।
কীভাবে বুঝবেন আপনি আক্রান্ত?
চিকেন পক্সের লক্ষণ সাধারণত তিন ধাপে প্রকাশ পায়:
প্রাথমিক লক্ষণ: হঠাৎ জ্বর (১০১–১০৩ ডিগ্রি), মাথাব্যথা, গলা ব্যথা, শরীর ব্যথা, ক্লান্তি ও ক্ষুধামন্দা।
দ্বিতীয় ধাপ: জ্বর শুরু হওয়ার ১–২ দিনের মধ্যে ত্বকে লালচে ছোট ছোট দানা দেখা যায়।
তৃতীয় ধাপ: এই দানাগুলো ধীরে ধীরে পানিভর্তি ফোসকায় রূপ নেয় এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে—বিশেষ করে মুখ, পিঠ ও বুকের চারপাশে। সঙ্গে তীব্র চুলকানি, দুর্বলতা ও অনেক সময় বমি বমি ভাব থাকে।
চিকিৎসা ও করণীয়
চিকেন পক্স হলে প্রথম করণীয় হলো আইসোলেশন বা পৃথককরণ। রোগীকে আলাদা ঘরে রাখুন এবং পরিবারের গর্ভবতী নারী, শিশু ও বয়স্কদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখুন। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জ্বর কমানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে, তবে শিশুদের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কখনো ফোসকা ফাটাবেন না।
ফুসকুড়িতে চুলকানি করলে দাগ ও ইনফেকশন বাড়তে পারে, তাই নখ ছোট করে রাখুন।
প্রতিদিন হালকা গরম পানিতে গোসল করুন, চাইলে নিমপাতা ব্যবহার করুন।
নরম ও সুতি কাপড় পরিধান করুন।
সম্ভাব্য জটিলতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা
চিকেন পক্স সাধারণত কয়েকদিনে সেরে যায়, তবে কখনও কখনও এটি জটিলতাও তৈরি করতে পারে। যেমন—ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, নিউমোনিয়া বা ত্বকে গভীর ক্ষত। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এই জটিলতার আশঙ্কা বেশি থাকে।
প্রতিরোধের উপায়
আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা করে রাখুন।
হাত ধোয়ার অভ্যাস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
ভ্যারিসেলা টিকা নিন—এটি রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।
প্রথম ডোজ শৈশবে, এবং পাঁচ বছর পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া হয়।
টিকাগ্রহণকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা অনেক কম হয়।
মন্তব্য করুন