বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশে বড় রকমের সংস্কার করা এবং দেশকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে চীনের সাহায্য-সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি চীন সফরকালে বেইজিংয়ে চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা তার চীন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, “আমার খুব ভালো লাগছে। পুরোনো বন্ধু-বান্ধব ও সহযোগীদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। চীন সরকারের পক্ষ থেকে আমি অত্যন্ত সমর্থন পেয়েছি, যা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন।” তিনি বিশেষভাবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট শি’র সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল, তখন তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এবারও তিনি সেই স্মৃতি স্মরণ করেছেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।”
সাক্ষাৎকারে প্রফেসর ইউনূসের ‘তিন শূন্য তত্ত্ব’ (দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা) এবং প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের আধুনিকীকরণ তত্ত্বের মধ্যে মিল নিয়ে আলোচনা হয়। ইউনূস বলেন, “উভয় তত্ত্বের লক্ষ্য একই—একটি নতুন ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলা। বর্তমান সভ্যতার কাঠামো টেকসই নয়, তাই আমাদের নতুনভাবে ভাবতে হবে।”
তিনি বলেন, চীনের উচ্চপদস্থ নেতৃবৃন্দ তার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নতুন চিন্তার বিস্তার নিয়ে তার পরিকল্পনা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। “চীনের উপপ্রধানমন্ত্রীও তিন শূন্য তত্ত্বের প্রশংসা করেছেন এবং এ বিষয়ে আরও কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন,” যোগ করেন ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা তার ক্ষুদ্রঋণ (মাইক্রোক্রেডিট) মডেলের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। তিনি বলেন, “চায়নিজ একাডেমি অব সোস্যাল সায়েন্সেসের প্রফেসর ড্যু’র প্রচেষ্টায় চীনে মাইক্রোক্রেডিট অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়েছে, যা দেশজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখছে।”
প্রফেসর ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, যা শুধু অর্থনৈতিক নয়—সামাজিক ও পরিবেশগত পরিবর্তনও বয়ে আনবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বিশেষ করে চীনের সমর্থন অপরিহার্য।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, চীনের সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশকে একটি টেকসই ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করবে।
মন্তব্য করুন