লাইফস্টাইল ডেস্ক 

বিভিন্ন সংস্কৃতিতে তিতকুটে শাক খাবারের আগে খাওয়া হয়ে থাকে। পুষ্টি, গাট হেলথ ও নারীদের সুস্থতার ওপর কাজ করা চিকিৎসক ড. অ্যামি শাহ ব্যাখ্যা করেছেন, আরুগুলা (একধরনের তেতো শাক) কিভাবে হজম এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য বিস্ময়কর উপকার দেয়।
কিভাবে তিতকুটে শাক হজমকে সক্রিয় করে
ড. শাহ বর্ণনা করেন, আরুগুলার তিতকুটে যৌগগুলো জিভের পাশাপাশি পাকস্থলি ও অন্ত্রের আস্তরণে থাকা তিত স্বাদগ্রাহকদের মাধ্যমে একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। এই রিসেপ্টরগুলো লালা, পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড (এইচসিএল), পিত্তরস ও অগ্ন্যাশয়ের এনজাইম নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে।
এই যৌথ নিঃসরণ আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সামনের খাবারের জন্য প্রস্তুত করে।
লালা হজম প্রক্রিয়ার সূচনা করে। কারণ, এটি স্টার্চ ভাঙা শুরু করে। পাকস্থলীর এসিড জটিল প্রোটিনকে ভেঙে দিয়ে এনজাইমগুলোর কাজ সহজ করে।
পিত্তরস (চর্বি ভাঙে) শোষণ বাড়িয়ে হজমে সহায়তা করে এবং অগ্ন্যাশয়ের এনজাইম প্রোটিন, চর্বি ও কার্বোহাইড্রেট ভাঙতে কার্যকরভাবে কাজ করে। এসব প্রক্রিয়া একসঙ্গে হজমকে আরো মসৃণ করে এবং গ্যাস, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সাধারণ অস্বস্তি কমায়।
পেটের স্বাস্থ্যের জন্য আরুগুলা কেন আদর্শ
ড. শাহ-এর মতে, কার্বোহাইড্রেটের তুলনায় প্রোটিন ও চর্বির বেশি হজমশক্তির প্রয়োজন পড়ে এবং অনেক মানুষের এই দুই ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টের অসম্পূর্ণ হজমের সমস্যা রয়েছে। খাবারের ১০-১৫ মিনিট আগে অল্প পরিমাণ তেতো আরুগুলা খেলে হজম রসের নিঃসরণ বাড়ে এবং পুষ্টি শোষণ উন্নত হয়।
এই সহজ অভ্যাস অন্ত্রে অপরিপাক্য খাবারের গাঁজন হওয়ার সম্ভাবনা কমায়, অস্বস্তি প্রতিরোধ করে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির ঝুঁকি কমায়।
গাট ও লিভারের অতিরিক্ত উপকারিতা
ড. শাহ আরো বলেন, আরুগুলায় প্রিবায়োটিক ফাইবার থাকে , যা ভালো ব্যাকটেরিয়াকে খাদ্য দেয়। ফলে মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য বজায় থাকে, কোলনের স্বাস্থ্য উন্নত হয়, অন্ত্রের বাধা আরো শক্তিশালী হয়।
আরুগুলায় সালফার-ভিত্তিক যৌগ থাকে, যা লিভারের ফেজ-২ এনজাইম সক্রিয় করে ডিটক্সিফিকেশন বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ভিটামিন সি এবং কোয়ারসেটিনের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লিভারের কোষকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
এ ছাড়া নিয়মিত তেতো শাক যেমন আরুগুলা খেলে হজম উন্নত করে, লিভারের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং শরীরের টক্সিন বের করতে সহায়তা করে।
ড. অ্যামি’র বাস্তব টিপস
খাবারের আগে অল্প কিছু বুনো বা রকেট আরুগুলা পাতা খান। ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেতে হবে। নতুন হলে কম পরিমাণে শুরু করতে হবে, যাতে তেতো স্বাদে অভ্যস্ত হওয়া যায়। এ ছাড়া অন্যান্য তেতো শাক, যেমন ড্যান্ডেলিয়ন গ্রিনস, রাডিকিও, এনডাইভ, বিশেষভাবে প্রোটিন বা চর্বিযুক্ত খাবারের আগে (যেমন ডিম, মাংস, ক্রিমযুক্ত খাবার) এগুলো খেলে হজম আরো আরামদায়ক হয় এবং পুষ্টি শোষণ বাড়ে।
প্রাচীন অভ্যাস ও আধুনিক সমর্থন
আয়ুর্বেদ ও প্রাচীন চীনা চিকিৎসায়ও খাবারের আগে তেতো খাবার খাওয়ার গুরুত্ব বলা হয়েছে। এতে দ্রুত তৃপ্তি আসে, অতিভোজন কমে, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও বিপাকের উন্নতি হয়। ড. অ্যামি শাহ জানান, আরুগুলার মতো তেতো শাক হজম উন্নত করে, গাট মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং লিভার ডিটক্স বৃদ্ধি করে
খাবারের আগে সামান্য আরুগুলা শাক খেলে পুষ্টি শোষণ বাড়ে এবং হজম শক্তি ভালো থাকে। এটি একটি প্রাকৃতিক উপায়, যা শরীরের স্থিতিশীলতা ও শক্তি বজায় রাখতে সহায়ক এবং প্রাচীন ধারণাকে আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত করে।
মন্তব্য করুন