গাইবান্ধা প্রতিনিধি 

আঙিনায় বিছানো চটের ওপর বসে আছে একদল শিশু। হেমন্তের বিকেলের নরম রোদ আশপাশের গাছপালার ফাঁক গলে পড়ছে কারও কারও মুখে। সবার সামনে বইয়ের পাতা খোলা। অক্ষরে অক্ষরে আঙুল বসিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ছে কোমলমতি শিশুরা। আর তাদের মাঝে বসে আছেন এক বৃদ্ধ। তাঁর চুল-দাড়ি সাদা, পরনে মলিন পাঞ্জাবি। সত্তরোর্ধ্ব এই ব্যক্তিই খুদে শিক্ষার্থীদের শিক্ষক; নাম লুৎফর রহমান। প্রায় পাঁচ দশক ধরে এভাবে শিশুদের পড়িয়ে আসছেন তিনি। পড়ানো বাবদ জনপ্রতি দৈনিক এক টাকা সম্মানী নেন। এ জন্য তিনি পরিচিতি পেয়েছেন ‘এক টাকার মাস্টার’ নামে।
সামান্য সম্মানী নিয়ে পড়ানোর বিষয়ে লুৎফর রহমানের ভাষ্য- এলাকার বেশির ভাগ মানুষ গরিব। অভাবের কারণে ছেলেমেয়েদের পড়াতে চান না। তাই তিনি নামমাত্র ফি নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। তাঁর হাজারো শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে। তাদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশ কর্মকর্তা, কেউ ভালো প্রতিষ্ঠানে বড় পদে কর্মরত। এটাই তাঁর বড় পাওয়া; টাকাপয়সা বিষয় নয়।
৭৭ বছর বয়সী লুৎফর রহমানের বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের বাগুড়িয়া গ্রামে। ফুলছড়ি উপজেলার গুণভরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এর ঠিক দুই বছর পর তাঁর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। ১৯৭৪ সালে ভয়াবহ বন্যায় সব হারায় লুৎফরের পরিবার। তাঁর বাপ-দাদার ছিল গোয়ালভরা গরু, ৫০-
৬০ বিঘা জমি, ঘরবাড়ি। কিন্তু সবকিছু বন্যা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে হারিয়ে যায়। তারপর অনেকের মতো লুৎফরের পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলে সরকারি বেড়িবাঁধে। এই পরিস্থিতিতে আর পড়ালেখায় এগোতে পারেননি তিনি। তবে সংকল্প করেন- নিজের স্বপ্ন ছড়িয়ে দেবেন দরিদ্র শিশুদের মাঝে। ১৯৭৫ সালে তিনি বিয়ে করার পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের পড়ানো শুরু করেন। প্রথম দিকে বিনা পয়সায় পড়াতেন লুৎফর। একটা সময় সম্মানী হিসেবে এক টাকা নেওয়া শুরু
মন্তব্য করুন