কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি 

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কুড়িগ্রাম জেলায় টানা তিন দিনের বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় চলতি মৌসুমের আমন ধানসহ আগাম শীতকালীন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি শঙ্কা রয়েছে। এতে জেলার কৃষকদের নেমে এসেছে হতাশা।
শনিবার (১ নভেম্বর) সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শান্ত আকাশে হঠাৎ মেঘের গর্জন শুরু হয়, এরপর শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া। শুক্রবার রাত থেকে তা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। এই টানা বৃষ্টি ও বাতাসে ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে, নুয়ে পড়েছে পাকা ও আধাপাকা ধানের শিষ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন রবি শস্যও।
রাজারহাট আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৮.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টাও এ ধরণের বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।
বৃষ্টিতে নষ্টর শঙ্কা হয়েছে কৃষকদের সোনালি স্বপ্ন। মাঠের পাকা ও আধাপাকা আমন ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়ায় ফলন তোলার আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শিষ। নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ, রতনপুর, সাপখাওয়া, দামালগ্রামসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের শত শত একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশপাশের গ্রামগুলোতেও একই চিত্র দেখা গেছে।
দামালগ্রাম এলাকার কৃষক আতিয়ার রহমান বলেন, আমি ৫ একর জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। ১৫ দিন পর কাটার কথা ছিল। কিন্তু এখন মাঠে পানি জমে শিষ নষ্ট হচ্ছে। ফলে ফলন অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। শুধু ধান নয়, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ ও আলু ক্ষেতেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অনেক জমিতে পানি জমে থাকার কারণে গাছের শিকড় পচে যাচ্ছে।
একই এলাকার কৃষক মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় প্রায় ১৫ একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ধানের গাছগুলো বাতাসে হেলে পড়েছে, অনেক শিষ ঝরে গেছে। এখন আমরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রাম জেলায় আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে, তবে চাষ হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৬০০ হেক্টরে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার ১০০ হেক্টর বেশি।
স্থানীয় কৃষকদের দাবি, এই ক্রান্তিকালে সরকার ও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সহায়তা, দিকনির্দেশনা ও প্রণোদনা প্রদান জরুরি, যাতে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা হলেও কমানো যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (পিপি) তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, “নিম্নচাপের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া হয়েছে। এতে কিছু এলাকায় ধানক্ষতি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শুরু করেছেন। কৃষকদের দ্রুত পানি নিষ্কাশন, নুয়ে পড়া ধানগাছ বাঁধা ও জমিতে পানি না রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে এলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।”
তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পরিমাণ নিরূপণ করে দ্রুত প্রণোদনা ও পুনর্বাসন সহায়তা প্রদানের জন্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন