ধর্ম ডেস্ক 

মানুষের মধ্যে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে- ফেরেশতারা অনিন্দ্যসুন্দর। যুগে যুগে ‘ফেরেশতার মতো সুন্দর’ এবং ‘শয়তানের মতো কুৎসিত’—এই দুটি উপমা দিয়ে সৌন্দর্য ও কুৎসিতের তুলনা করা হয়ে আসছে। পবিত্র কোরআনেও মানুষের এই বিশ্বাসের প্রতিফলন পাওয়া যায়- ‘অতঃপর তারা যখন তাকে দেখল, তখন তাকে অনেক সৌন্দর্যের অধিকারী মনে করল এবং তারা নিজদের হাত কেটে ফেলল আর বলল, ‘মহিমা আল্লাহর, এতো মানুষ নয়; এ তো এক সম্মানিত ফেরেশতা।’ (সুরা ইউসুফ: ৩১)
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, মানুষ যদিও ফেরেশতাদের চোখে দেখে না, তবুও তাদের পবিত্রতা ও গুণাবলির কারণে কাউকে ‘ফেরেশতার মতো’ বলা হয়ে থাকে। (তাফসিরে কুরতুবি: ৯/১৮৩)
সৌন্দর্যের বর্ণনা
ফেরেশতাদের শারীরিক সৌন্দর্য সম্পর্কে কোরআনে এসেছে- ‘তাকে শিক্ষা দিয়েছেন এক শক্তিশালী, প্রজ্ঞাসম্পন্ন (ফেরেশতা)। সে তার নিজ আকৃতিতে স্থির ছিল।’ (সুরা নাজম: ৫-৬)
এখানে ব্যবহৃত ‘জু মিররাতিন’ শব্দের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এর অর্থ—‘যিনি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর’। তাবেঈ কাতাদাহ (রহ.) বলেন, ‘দীর্ঘ ও সুঠাম দেহের অধিকারী’। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
ইবনুল কায়্যিম (রহ.) ব্যাখ্যা করেন, ‘মিররা’ এমন সৌন্দর্য ও শুদ্ধতার প্রতীক যা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ ত্রুটি থেকে মুক্ত। (ইগাসাতুল লাহফান: ২/১২৯)
ফেরেশতাদের ভীতিপ্রদ রূপও রয়েছে
ফেরেশতাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের দায়িত্ব অনুসারে ভীতিপ্রদ রূপ ধারণ করেন। যেমন জাহান্নামের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- ‘যাদের ওপর নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতারা।’ (সুরা তাহরিম: ৬)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যখন কোনো অবিশ্বাসী মৃত্যুবরণ করে, তখন তার কাছে কুৎসিত চেহারাবিশিষ্ট ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয়।’ (মেশকাতুল মাসাবিহ: ১৬৩০)
নবী (স.)-এর দৃষ্টিতে ফেরেশতার স্বরূপ
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিশ্বাস অনুযায়ী, রাসুলুল্লাহ (স.) ফেরেশতাদের আসল রূপে দেখেছেন। তিনি জিবরাইল (আ.)-কে তাঁর মূল রূপে দুবার দেখেছেন। ১. স্পষ্ট দিগন্তে (সুরা তাকভির: ২৩) ২. সিদরাতুল মুনতাহায় (সুরা নাজম: ১৩-১৫) সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি জিব্রাঈল (আ.)-কে তার আসল আকার ও চেহারায় দেখেছেন। তিনি আকাশের দিকচক্রবাল জুড়ে অবস্থান করছিলেন। (সহিহ বুখারি: ৩২৩৪) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (স.) জিবরাইল (আ.)-কে ৬০০ ডানাবিশিষ্ট অবস্থায় দেখেন। (সহিহ বুখারি: ৪৮৫৭)
রূপ পরিবর্তনের ক্ষমতা
ফেরেশতারা মানুষের সামনে উপস্থিত হতে আল্লাহর আদেশে মানবাকৃতি ধারণ করতে পারেন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তখন আমি তার কাছে আমার রূহকে (অর্থাৎ জিবরীলকে) পাঠিয়ে দিলাম। তখন সে (অর্থাৎ জিবরাইল) তার সামনে পূর্ণ মানুষের আকৃতি ধারণ করল।’ (সুরা মরিয়ম: ১৭)
একইভাবে, জিবরাইল (আ.) কখনো সাহাবি দাহইয়া কালবি (রা.)-এর রূপে, আবার কখনো এক অজ্ঞাত মানুষ হিসেবে নবীজির (স.) কাছে এসে দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিতেন। (সহিহ মুসলিম: ১)
মোটকথা, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে ফেরেশতারা আল্লাহর নূর থেকে সৃষ্ট এক বিশেষ শ্রেণির সৃষ্টি, যারা পাপ থেকে মুক্ত, সর্বদা আল্লাহর আদেশ পালনকারী এবং প্রজ্ঞা ও সৌন্দর্যের প্রতীক। তাদের রূপ একমাত্রিক নয়; বরং দায়িত্ব ও পরিস্থিতি অনুসারে তা পরিবর্তনশীল। সাধারণ মানুষ তাদের আসল রূপ দেখতে পায় না, তবে আল্লাহর অনুমতিতে ফেরেশতারা দৃশ্যমান রূপে প্রকাশ পেতে পারেন।
মন্তব্য করুন