কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামে ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। শুক্রবার রাত থেকে বাঁধের প্রায় ৩০ মিটার অংশে একের পর এক সিসি ব্লক ধসে পড়ছে। এতে সহস্রাধিক পরিবার ও কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমি হুমকির মুখে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এ অবস্থায় তারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই বাঁধই আমাদের রক্ষার ভরসা। যদি ভেঙে যায়, হাজার হাজার পরিবার ও জমি-জিরাত সবই নদীতে বিলীন হবে। ২০২২ সালের বন্যার ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এবার আবারও বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা।
আরেক কৃষক নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, প্রকল্পে অনিয়মের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যথেষ্ট সিসি ব্লক ফেলা হয়নি। ফলে স্রোতের চাপ বাঁধে সরাসরি আঘাত করছে।
২০২০ সালে ধরলা নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য ৬২৯ কোটি টাকার ‘ধরলা প্রকল্প’ হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পের আওতায় ২০ কিলোমিটার ২৯০ মিটার নদীতীর সংরক্ষণ, ১৭ কিলোমিটার ৯০০ মিটার বিকল্প বাঁধ নির্মাণ ও ১৪ কিলোমিটার ৮৮৯ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দাবি, ইতোমধ্যে ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্পের ফলে প্রায় ২২ হাজার ৪০০ পরিবার, ৫০টি হাট-বাজার, ৩০টি নৌ-ঘাট ও ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে সারডোব গ্রামে নতুন করে বাঁধ ধসে পড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও অবহেলার অভিযোগকে সামনে নিয়ে এসেছে।
পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মুন্না হক জানান, উজানে চর জেগে উঠায় নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে স্রোত সরাসরি বাঁধে আঘাত করছে। এ কারণে কিছু অংশ দেবে গেছে। “আমরা আপাতত জিও ব্যাগ ফেলছি। পানি কমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করা হবে।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, প্রকল্পটি এখনও হস্তান্তর হয়নি। বাঁধে ক্ষতি হলে সম্পূর্ণ দায়ভার ঠিকাদারকেই নিতে হবে। আমরা বাঁধটির ওপর নজর রাখছি। আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। পানি নেমে গেলে নিয়ম অনুযায়ী মেরামত করা হবে।
গ্রামবাসীর আশঙ্কা, জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে ধস দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটবে।
মন্তব্য করুন