কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নে আট বছর আগে ভয়াবহ বন্যায় ভেঙে যাওয়া ব্রিজ আজও পুনর্নির্মাণ হয়নি। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অন্তত চার গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ। স্থানীয়দের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো ও ড্রামভিত্তিক ভেলা তৈরি করে অস্থায়ী যাতায়াত ব্যবস্থা চালু রাখা হলেও সেটিও এখন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। রাতে কিংবা বর্ষার মৌসুমে চলাচল কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে।
জানা গেছে, রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মেকলী ও ছাটকালুয়া গ্রামের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত কামারের ছড়া বিলে নির্মিত ব্রিজটি ছিল ওই এলাকার একমাত্র যাতায়াতের পথ। ব্রিজটি দিয়ে মেকলী, ছাটকালুয়া, চতুরভুজ ও গড়ের বাজারসহ কয়েক গ্রামের মানুষ নিয়মিত বাজার-স্কুলসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতেন। কিন্তু ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় ব্রিজটির তলদেশের মাটি সরে গিয়ে সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। সেই থেকে গ্রামবাসী কার্যত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন।
ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পর স্থানীয়রা প্রথমে বাঁশের সাঁকো এবং পরে ড্রাম দিয়ে ভাসমান ভেলা তৈরি করেন। কিন্তু সেগুলোও টেকসই না হওয়ায় প্রতি বছরই নতুন করে বানাতে হয়। তাছাড়া এসব সাঁকো বেশ নড়বড়ে ও বিপজ্জনক হওয়ায় রাতের বেলা বা বর্ষায় চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আলী (৬০) বলেন, ব্রিজটা পুরনো ছিল, তাই বন্যায় ভেঙে যায়। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত আর ব্রিজ হয়নি। আমরা কখনো বাঁশের সাঁকো, কখনো ড্রামের ভেলা দিয়ে পার হচ্ছি। এতে কত কষ্ট হচ্ছে বলে বোঝানো যাবে না।
একই গ্রামের মোশারফ হোসেন (৫০) অভিযোগ করে বলেন, রাতে তো এই সাঁকো দিয়ে যাওয়া আসা সম্ভব না। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। পাশেই একতা বাজার, কিন্তু ব্রিজ না থাকায় আমাদের যেতে কষ্ট হয়।
ছাটকালুয়া গ্রামের আবুল হোসেন (৫৭) জানান, আমরা কয়েক গ্রামের মানুষ টাকা ও ধান তুলে বাঁশ দিয়ে সাঁকো বানাই। কিন্তু প্রতি বছরই ভেঙে যায়। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এই সাঁকো দিয়ে পার হওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
এ বিষয়ে ছিনাই ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, ছাটকালুয়া ও মেকলী গ্রামের মাঝের ব্রিজটি ২০১৭ সালের বন্যায় ভেঙে যায়। এরপর থেকে গ্রামবাসী নিজেরাই ভাসমান বাঁশের সাঁকো বানিয়ে যাতায়াত করছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
রাজারহাট উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ মণ্ডল জানান, ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণের জন্য ‘বিলো ১০০ মিটার প্রকল্পের’ অধীনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।
এলাকাবাসীর দাবি, প্রতিশ্রুতি পেলেও এখনো বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি। আট বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো ও ভেলার ওপর নির্ভর করে জীবনযাপন করছে তারা। এর ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষিপণ্য পরিবহনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে গ্রামবাসী অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
মন্তব্য করুন