আবারও স্পষ্ট ফিক্সিং ইস্যুতে টালমাটাল দেশের ক্রিকেট। তদন্তকারী দলগুলোর প্রতিবেদন উপসংহারে পৌঁছানোয় একের পর এক খবর নতুন করে সামনে আসছে। সেখানে বেশ কয়েকজন তারকা ক্রিকেটারের নামে যেমন পাহাড়সম অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যেমন, তেমনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সর্বশেষ আসরে ফিক্সিংয়ের অংশ হতে সতীর্থ ক্রিকেটারদের একপ্রকার বাধ্য করা হতো বলেও অভিযোগ মিলেছে। এসব অভিযোগের তীর নির্দিষ্ট একজন ক্রিকেটারের দিকেই বেশি ছুটেছে।
টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বিতর্কিত দল দুর্বার রাজশাহীর খুব গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন ওই ক্রিকেটার। বিপিএলের সর্বশেষ মৌসুমের শুরুর দিকেই ম্যাচ চলাকালে তাঁর সন্দেহজনক আচরণবিধির জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) তদন্তকারী দলের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানান একই দলের দুই তরুণ খেলোয়াড়।
১১তম বিপিএলে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে একটি ম্যাচের ফলকে মনে হচ্ছিল নিছকই আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপার। জয়ের জন্য ১৯৮ রানের পিছু নিয়ে ১৪ ওভারে মাত্র ১২০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলের পক্ষে কারোর বাজি ধরার কথা নয়।
কিন্তু ঘটেছে ঠিক উল্টোটা। ম্যাচের দৃশ্যপট আকস্মিকভাবে বদলে যায়। বিসিবির দুর্নীতিবিরোধী বিভাগের (আকু) হাত ধরে পরে স্বাধীন তদন্ত কমিটির কাছে আসা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই ম্যাচে ‘বিশেষ দুটি ওভার’ শুরুর আগে নির্দিষ্ট একটি বেটিং ওয়েবসাইটে ‘অনেক রান উঠবে’ বলে ধারণা দেওয়া হয়। আশ্চর্যজনকভাবে সেই দুই ওভার থেকে ওঠে ৩৯ রান! জিতে যায় পরে ব্যাটিংয়ে নেমে ধুঁকতে থাকা দলটি।
সেদিন কিছু আঁচ করতে না পারলেও সিলেট পর্বে গিয়ে চোখ খোলে মিরপুরে ‘বিজিত’ দলের বোলারদের। ৯ জানুয়ারি আরেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির বিপক্ষে একই ধরনের হারের পর সতর্ক হন দলটির দুই বোলার। ১২ জানুয়ারি রাতে ম্যাচ শেষে তাঁরা দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এক ক্রিকেটারের নামে নালিশ করেন তদন্তকারী দলের কাছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী সেখানে এক তরুণ স্পিনারের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আগের বলে আমি যখন ছয় হজম করলাম, তিনি (প্ররোচনাকারী জ্যেষ্ঠ ক্রিকেটার) আমার কাছে এসে পরের তিনটি বলও একই জায়গায় করার পরামর্শ দেন।’ আরেকজন পেসার বলেছেন, ‘উনি যেভাবে চাচ্ছেন, সেভাবে বল করলে ব্যাটাররা খুব পেটাচ্ছিল।
তাঁর সিদ্ধান্তগুলো এভাবে মানতে থাকলে তো আমাদের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে!’ এমনকি বোলারদের সুবিধা অনুযায়ী ফিল্ডিং সাজাতে বাধা দিয়ে নিজের মতো করে অন্য পাশে নিয়ে যেতেন বলেও অভিযোগ আছে সেই জ্যেষ্ঠ ক্রিকেটারটির ব্যাপারে। এসব নিয়ে জাতীয় দলে খেলা ত্রিশোর্ধ্ব ওই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ছিল দলটির দুই পাকিস্তানি কোচেরও।
এত সব অভিযোগের পর ১২ জানুয়ারি ম্যাচ শেষে ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছোটানো এই ক্রিকেটারের হোটেল কক্ষে রাত ১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। সেই প্রতিবেদনের নথিও বুঝে পেয়েছে বিসিবি গঠিত তিন সদস্যের স্বাধীন তদন্ত কমিটি, যেখানে জাতীয় দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে খেলা এই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড বা ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার আলামত পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ডানহাতি এক পেসার, যিনি বাংলাদেশ দলের একসময় নিয়মিত সদস্য ছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে তাঁর বোলিং পারফরম্যান্সেও বেশ কিছু অস্বাভাবিকতা খুঁজে পান তদন্তকারীরা।
সেই বোলারের অবশ্য আবার জাতীয় দলে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে অভিযোগের পাহাড় নিয়েও এরই মধ্যে বাংলাদেশ দলের হয়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন জুনিয়র ক্রিকেটারদের প্ররোচিত করা সিনিয়র ক্রিকেটারটি। এর সর্বশেষটি তিনি খেলেছেন শ্রীলঙ্কায়। অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে তাঁকে দলে অন্তর্ভুক্ত করার আগে তৎকালীন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের কাছ থেকে নাকি অনাপত্তিপত্র নিয়েছিল নির্বাচক কমিটি।
মন্তব্য করুন