কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের ভয়াবহ ভাঙনে প্রতিদিনই নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন নদীপাড়ের মানুষ। শুধু চলতি মাসেই যাত্রাপুরের বানিয়াপাড়া গ্রামে অন্তত একশ’ পরিবার তাদের বসতবাড়ি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে, আবার কেউ গন্তব্যহীন পথে ছুটছেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।
নদীর তীব্র স্রোতে প্রতি মুহূর্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি ও আবাদি জমি। ধান রোপণসহ বিভিন্ন ফসলি জমি নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়ায় চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ দুর্ভোগ নতুন নয় বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছর একইভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়তে হয় তাদের।
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজেদের ঘরবাড়ি সরাচ্ছেন। নদীর তীর থেকে গরু-ছাগল, আসবাবপত্র, বাঁশের বেড়া সবকিছুই যেন ছিন্নমূল মানুষের মতো দিকহারা হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে। ভাঙনের শিকার কৃষক আমজাদ আলী হতাশ কণ্ঠে বলেন, এ পর্যন্ত ছয়বার বাড়ি সরাইছি। আরও কতোবার সরাইতে হইব জানি না।
স্থানীয় চরভিত্তিক গবেষণা ও অধিকার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘জাস্টিস ফর চর’স অ্যান্ড লোকাল রিসার্চের পরিচালক স্বপন কুমার সরকার বলেন, কুড়িগ্রামের মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ নদীভাঙন। প্রতিবছর শত শত পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে, কৃষিজমি বিলীন হয়ে যায়। এটি কেবল কুড়িগ্রামের নয় এটি জাতীয় সমস্যা। সরকারকে দ্রুত স্থায়ী তীররক্ষা প্রকল্প হাতে নিতে হবে এবং একইসাথে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিষয়টি তুলে ধরা জরুরি, যাতে বিশ্বনেতারা চরের মানুষের পাশে দাঁড়ান।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রহিমুদ্দিন হায়দার রিপন সতর্ক করে বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুর হাটসহ পুরো গ্রাম ভাঙনের হুমকিতে পড়বে।
কৃষিজমি বিলীন হয়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে স্থানীয় অর্থনীতি। জেলার কৃষিজমিই কুড়িগ্রামের প্রধান চালিকাশক্তি। কৃষিপণ্য বিক্রি করেই চলে কৃষকের সংসার, আর সরকারও এ খাত থেকে পায় গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহায়তা। এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ফসলি জমি হারানোয় কৃষকদের জীবিকা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তাও প্রয়োজন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রাকিবুল হাসান বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ছাড়া কুড়িগ্রামের নদীভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। প্রতিবছর শত শত পরিবার ঘরবাড়ি ও জীবিকা হারাচ্ছে; তাই এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
মন্তব্য করুন