কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট, পর্যাপ্ত জনবল ও ওষুধ-সরঞ্জামের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। প্রায় ছয় লাখ মানুষের বসবাসের এ উপজেলায় ৫০ শয্যার হাসপাতালে অনুমোদিত চিকিৎসকের ১৮টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। ফলে প্রতিদিন শত শত রোগী যথাযথ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই নয়, উপজেলার রায়গঞ্জে ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বন্ধ পড়ে আছে। কচাকাটায় ৩০ শয্যা হাসপাতাল দ্রুত চালুর দাবিও দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত রয়েছে।
এ অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ও সংকট নিরসনের দাবিতে মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকাল ১১টায় নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। প্রসূতি জটিলতা, সড়ক দুর্ঘটনা, ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি ও অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসা প্রায় বন্ধ। পর্যাপ্ত ওষুধের অভাবে রোগীরা বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, যা নিম্ন আয়ের মানুষদের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় ল্যাব, এক্স-রে ও সার্জারি সরঞ্জাম না থাকায় রোগীদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা জেলা সদরে যেতে হচ্ছে। এতে যেমন সময় নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ব্যয়ও কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তবে সাধারণ মানুষ বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো: গোলাম রসুল রাজা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শফিউল আলম শফি, যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম, সদস্য সচিব মোকলেছুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।
মানববন্ধন শেষে অংশগ্রহণকারীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বরাবর একটি স্বারকলিপি প্রদান করেন। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুজন সাহা বলেন, এখানে চিকিৎসক সংকট সত্যিই রয়েছে। কিছু কর্মকর্তা আমাদের এখান থেকে বেতন পাচ্ছেন অথচ সুবিধা দিচ্ছেন অন্য হাসপাতালে। বিষয়গুলো আমরা ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত সমাধান আসবে। তবে স্থানীয়দের সহযোগিতা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করা সম্ভব নয়।
মানববন্ধনে উত্থাপিত দাবি সংবলিত আবেদনপত্রের অনুলিপি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন