রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বাড়ার কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
বর্তমানে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে চরগুলো বন্যা দেখা দিয়েছে । চরবাসী গবাদি পশু ও মালপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহী পয়েন্টে সীমান্তে পদ্মার পানি ছিল ১৭ দশমিক ৪২ মিটার। রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক শূন্য ০৫ মিটার। ফলে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মার পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী পয়েন্টে পানি বেড়েছে দশমিক ১৭ মিটার।
এদিকে, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে টি-বাঁধ পরিদর্শন বন্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সরে যেতে বলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর পদ্মার পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৬৩ মিটার নীচ দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী পয়েন্টে রোববার (১০ আগস্ট) সকাল ৬টায় পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ১৩ মিটার। সেদিন সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ২২ মিটার। সোমবার (১১ আগস্ট) সকাল ৬টায় পানি বেড়ে হয়েছে ১৭ দশমিক ৩২ মিটার। আর একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ৩৯ মিটার।
জানা গেছে, গত ২৪ জুলাই থেকে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে শুরু হয়। সেদিন পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৩৫ মিটারের কাছে। তারপর আবার তা কমে যায়। আবার একই মাসের ৩১ জুলাই থেকে পানি বাড়তে শুরু করে । তার পর থেকে পানি বেড়েই চলেছে। পানি বৃদ্ধির কারনে চর এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে । ফলে চর থেকে গবাদিপশু নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছেন চরের বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পবা সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও আলাতলি ইউনিয়নের ১ হাজার ১০০ পরিবার পানিবন্দী। শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের ২ হাজার, উজিরপুর ইউনিয়নের ৪৫০ ও দূর্লভপুর ইউনিয়নের ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী নগরীর পার্শ্ববর্তী তালাইমারী, বাজে কাজলা ও পঞ্চবটি এলাকার শিক্ষার্থীরা পানির মাড়িয়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে।
চর খিদিরপুরের বাসিন্দা নসিমন বলেন, পদ্মা পানি বেড়েছে। জেগে উঠা চরগুলো ডুবে গেছে। ফলে চরের বেশিরভাগ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে এসেছেন। এছাড়া গবাদি পশুগুলো নদী থেকে লোকালয়ে নিয়ে যাচ্ছে । ফলে এক ধরনের গোখাদ্যের সংকট দেখা দিচ্ছে।
এক চরের বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সারাদিন চরের মানুষ তাদের মালামাল নৌকায় করে লোকালয়ে নিয়ে যাচ্ছে । এই পাশে অনেকে তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে রাখছেন। কেউ কেউ ভাড়া বাড়িতে উঠছেন। তবে যাদের গবাদি পশু রয়েছে। তারা পড়ছেন বিপাকে। এমন পরিস্থিতিতে এখনো অনেক গবাদি পশু চরে রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
রাজশাহী পবা উপজেলার ৮ নম্বর হরিয়ান ইউনিয়নের মেম্বার বলেন, পদ্মা নদীর পানিতে অনেক চর ডুবে গেছে। অনেকের বাড়ির কাছা কাছি পানি উঠে গেছে। অনেকেই চর ছেড়ে লোকালয়ে চলে গেছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে গবাদি পশুর নিয়ে। অনেকেই গবাদি পশু লোকালয়ে নিয়ে গেছে। এখনও অনেক গবাদি পশু চরে রয়েছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, ‘পদ্মা নদীর পানির লেবেল বাড়ছে। আগামী দুইদিন বাড়বে। তারপর স্থিতিশীল হতে পারে। পানি এখনও বিপৎসীমার নিচে রয়েছে । তবে বিপৎসীমার এক মিটার নিচে থেকেই আমরা সতর্কতা অবলম্বন করি। ইতিমধ্যে পদ্মার টি-বাঁধে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
মন্তব্য করুন