গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিলের ঘোষণা দিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান। তিনি বলেন, নিহতের মরদেহের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে মহানগরীর ওয়্যারলেস গেট এলাকায় জিএমপি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সাংবাদিক হত্যার দায় আমরা এড়াতে পারি না। জনবল স্বল্পতা ও নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে এই ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি, এজন্য দুঃখিত।”
পুলিশ কমিশনার জানান, ঘটনার সূত্রপাত হয় স্থানীয় বাদশা মিয়ার সঙ্গে গোলাপি নামে এক নারীর কথোপকথন থেকে, যা হানি ট্র্যাপের অংশ ছিল। বাদশা বিষয়টি বুঝতে পেরে গোলাপিকে ঘুষি মারেন। এরপর ওঁত পেতে থাকা গোলাপির সহযোগীরা বাদশাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিক তুহিন মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিলেন। আসামিরা ভিডিও ধারণ দেখতে পেয়ে তা মুছে ফেলতে তাকে ধাওয়া করে এবং চা স্টল থেকে ধরে এনে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।
ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আটজনকে শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে সাতজনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন—
কেটু মিজান (৩৫) – প্রধান আসামি, নামে ১৫টি মামলা, তার স্ত্রী গোলাপি (২৫) – হানি ট্র্যাপে জড়িত, মো. স্বাধীন (২৮) – নামে ২টি মামলা, আল আমিন (২১) – নামে ২টি মামলা, শাহজালাল (৩২) – নামে ৮টি মামলা, মো. ফয়সাল হাসান (২৩) – নামে ২টি মামলা, সুমন – মামলা সংখ্যা অজানা, আরেকজন আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান কমিশনার।
ড. নাজমুল করিম খান বলেন, “তুহিন সাহসীভাবে সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের কর্মকাণ্ড ভিডিও করছিলেন। এটি তার জীবনের বিনিময়ে শেষ হয়ে যায়। আমাদের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শী এবং পর্যাপ্ত প্রমাণ আছে। আসামিরা স্বীকার না করলেও প্রমাণ তাদের অপরাধ প্রমাণ করবে।”তিনি আরও বলেন, গাজীপুরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার চেষ্টা চলছে এবং কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। এ অবস্থায় পুলিশকে সহায়তা করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে সেখানেই বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে। শুক্রবার জানাজা শেষে সেখানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এ ঘটনায় বাসন থানায় নিহতের ভাই এবং বাদশা মিয়ার ভাই দুটি পৃথক মামলা করেছেন।
মন্তব্য করুন