কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির পৃথক দুটি অফিস এবং গণঅভ্যুত্থানের বছরপূর্তি অনুষ্ঠান পৃথকভাবে পালন করাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুর রহমান রানাকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেধে দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে জেলা বিএনপি। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও শোকজের জবাব দেননি অভিযুক্ত সাইফুর রহমান রানা। জেলা বিএনপি জানিয়েছে দলীয় আলোচনার পরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত। চলতি মাসের ৪ আগস্ট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ও সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ স্বাক্ষরিত নোটিশ প্রদান করা হয়।
কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়, গত ৭ এপ্রিল নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। যার নির্দিষ্ট একটি অফিস বিদ্যমান। তারপরও আপনি পূর্বের নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির সাইনবোর্ড ও অফিসটি এখনও রানার বাসভবনে খুলে রেখেছেন। যা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি। এমতাবস্তায় আপনার বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপের জন্য কেনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে না, তা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিন্মে স্বাক্ষরকারীগণের কাছে লিখিত জবাব প্রদানের জন্য বলা হইল।
জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইফুর রহমান রানা তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বাসায় উপজেলা বিএনপির অফিস কিংবা সাইনবোর্ড নেই। দলের যখন দুর্দিন ছিল কোথাও অফিস ছিল না তখন আমি আমার বাসায় উপজেলা বিএনপির কার্যকম পরিচালনার সুযোগ দিই। এখন নতুন কমিটি হয়েছে, তারা অফিসে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উপজেলা বিএনপির কোনো গ্রুপিংয়ের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ৫ আগস্ট পৃথক অনুষ্ঠানের যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে সেটি সঠিক নয়। উপজেলা বিএনপি পৃথক একটি সভা-সমাবেশ আয়োজন করে। সেখানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। উপজেলা ছাত্রদল এবং যুবদল পৃথক অনুষ্ঠান আয়োজন করে আমাকে আমন্ত্রণ করে। অতিথি হিসেবে ওই অনুষ্ঠানে যাওয়া কোনো অপরাধ হতে পারে না। জেলা কমিটির পক্ষ থেকে শোকজের পত্র প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তাই কোনো জবাব দেইনি।
এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম রসুল রাজা বলেন, জেলা বিএনপির সদস্য সাইফুর রহমান রানা নিজের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপিতে দ্বন্দ্ব সংঘাত ও বিভক্তির ইন্ধন দিয়ে চলছেন। ফলে দলকে সুসংগঠিত ও শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, চলতি বছর এপ্রিল মাসে নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। জেলা কমিটির অনুমতি সাপেক্ষ নাগেশ্বরী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ভাড়ায় নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির অফিস খোলা হয়। এখান থেকেই পরিচালনা করা হয় উপজেলা বিএনপির সকল কার্যক্রম। কিন্তু সাইফুর রহমান রানা তার নিজ বাড়িতে নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপি কার্যালয় সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছেন। এখান থেকেই তিনি বিপদগামী নেতাকর্মীদের নিয়ে এবং যুবদল, ছাত্রদল ও কৃষক দলের নেতাকর্মীদরকে নিয়ে দলের গ্রুপিং জিইয়ে রেখেছেন।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক সাইফুর রহমান রানাকে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। বিষয়টি কেন্দ্রে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন