গণঅভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামীকাল মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী সবপক্ষের উপস্থিতিতে এ ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ অতীতের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটের বর্ণনা থাকবে জুলাই ঘোষণাপত্রে। আরও থাকবে আওয়ামী শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা ও নিপীড়নের উল্লেখ। পাশাপাশি দাবি থাকবে গণহত্যার বিচারসহ শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র সংস্কারের।
ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গত বছরের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচি দেয়া হয়। তখন ঐক্যের স্বার্থে অভ্যুত্থানের সবপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে ঘোষণাপত্র তৈরির আশ্বাস দেয় সরকার। যদিও, পরে থমকে যায় এর অগ্রগতি।
জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতে গেল ৮ই মে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করে এনসিপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দলের নেতাকর্মীরা। এর একদিন পর জানানো হয়, ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে সরকার। ১ জুলাই শেষ হয় ওই সময়সীমাও। তবে জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে মতামতের জন্য বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির কাছে ঘোষণাপত্রের খসড়া পাঠায় সরকার।
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস। ঘোষণাপত্রের শুরুতে পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা, শোষণ, নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
১৯৭৫ সালের একদলীয় বাকশাল কায়েমের বিষয়টিরও উল্লেখ থাকছে এতে। সেই সঙ্গে, সিপাহি-জনতার বিপ্লবে বাকশালের অবসান কিভাবে হয়েছিল, সেটিও থাকছে জুলাই ঘোষণাপত্রে।
আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার সংগ্রাম ও নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানকেও ঘোষণাপত্রে যুক্ত করা হয়েছে। ওয়ান ইলেভেন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সে সময় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবেও এতে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের এই ঘোষণাপত্রে আরও যুক্ত থাকছে আওয়ামী লীগ শাসনামলের সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রহসনের ভোট আখ্যা দিয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, বিগত সরকার সেই ভোটের মাধ্যমে এদেশের মানুষকে তার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল।
শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে বিরোধী মত, জনগণকে চরম নির্যাতন-নিপীড়ন, সরকারি চাকুরীতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকুরী প্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের বিষয়গুলোও যুক্ত থাকছে জুলাই ঘোষণাপত্রে।
এছাড়াও, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনতার অভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট, আগামীতে বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার, আওয়ামী লীগ আমলের সকল গুম, খুন, দুর্নীতির বিচার ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সংস্কার উদ্যোগের বিষয়গুলোও যুক্ত করা হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত ঘোষণায়।
সবশেষ দফায় বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লবের এই ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।
৫ আগস্ট বেলা ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঘোষণাপত্র প্রকাশ অনুষ্ঠান শুরু হবে কলরব ও সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর গান দিয়ে। অনুষ্ঠানের সবশেষ আয়োজন হিসেবে রাত ৮টায় পরিবেশিত হবে আর্টসেল-এর গান।
মন্তব্য করুন