রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে এক প্রার্থীর ভাইভাতে জামায়াতপন্থী এক সাবেক এমপির সুপারিশের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের ফেসবুক স্টোরিতে ‘ভুলবশত’ প্রবেশপত্র প্রকাশিত হয়। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়।
ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক পদে আবেদনকারীর নাম আজমীরা আফরিন। আগামী ০৪ আগস্টে সাক্ষাৎকার দেবেন। আবেদনকারীর প্রবেশপত্রে সুপারিশ করেন চাপাইনবাবগঞ্জ ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং রাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের জীবন সদস্য লতিফুর রহমান। তিনি ১৯৮৬ এবং ১৯৯১ সালে জামায়াতে মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন।
গত দুইদিন আগে ছাত্রদলে নবগঠিত কমিটির আনন্দ মিছিল শেষে সমাবেশে নবগঠিত কমিটির সভাপতি সুলতান আহমদ রাহী বলেন, ‘উপাচার্য শিক্ষার্থীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানী করে নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।’
গতকাল উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান রাহীর ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করা সেই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় লিখেন, ‘রাবির একজন সাবেক ছাত্রের কাছ থেকে এধরনের মিথ্যা ও মনগড়া মন্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অসম্মানজনক! বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত এই মন্তব্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া।’
এ ঘটনার পরে গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে উপ-উপাচার্যের ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টের এক স্টোরিতে চাকরিপ্রার্থীর প্রবেশপত্রটি প্রকাশিত হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পোস্টি মুছে ফেলা হয় এবং এ ঘটনার বর্নণা দিয়ে তিনি একটি পোস্ট লিখেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমার ফেসবুকে হয়তো ভুলবশত একটি প্রবেশ পত্র আপলোড হয়েছ। প্রতিদিনই অনেক আবেদনকারী বা তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে সিভি-প্রবেশ পত্র দিয়ে যায়। রুয়ার নির্বাচনের সময় একজন আলামনাস (সাবেক এমপি) ফোন করে উনার এলাকার একজন আবেদনকারীর কথা বলেন। আমার অফিস এবং ফোনে এরকম ডজন খানেক সুপারিশ আছে। তবে এগুলো কোনোভাবেই লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় প্রভাব ফেলেনা। আশা করি বিষয়টি নিয়ে কেউ ভুল বুঝবেননা।’
এ দিকে স্টোরিটি শেয়ার হওয়ার পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনার।
ছাত্রদল সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী মিথ্যাবাদী না মাননীয় উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব স্যার?’
সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী মিশু লিখেন, ‘সুপারিশে আসা বাকি সমস্ত প্রবেশ পত্র পোস্ট করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা জানতে চাই কারা এইটারে বিশ্ববিদ্যালয় না ভাইভা দলীয় গোয়ালঘর বানাতে চায়।’
ছাত্র ফেডারেশনের যুগ্ম-আহ্বায়ক, ‘গতকাল ছাত্রদলের সভাপতি রাহী আপনাদের সমালোচনা করলে সবাই জোট করে মানহানির কথা তুললেন। মিথ্যাচারের অভিযোগ করলেন। বাক স্বাধীনতা এত দ্রুত হারালো? ভিন্নমত দমন পীড়ন সে তো আওয়ামী ফ্যাসীজমের রাজনীতির সামিল।’
সাবেক আরেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার লিখেন, ‘কাল রাতে আমাদের প্রো-ভিসি মহোদয়ের ছেলে ছাগলকান্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। গেমস খেলতে গিয়ে বাবার ফোন থেকে একজন জামায়াতপন্থী সাবেক এমপির রেফারেন্সসহ প্রবেশপত্র স্টোরি দিয়ে ফেলে। স্যার ক্লারিফিকেশনে লিখলেন এমন অনেক রেফারেন্স ওনার হোয়াটসঅ্যাপ, মেইল বা সরাসরি আসে কিন্তু প্রশ্ন হলো আপনাদের কাছে রেফারেন্স দেওয়ার সাহস কেনো পাবে? আপনারা কোন চেতনায় প্রশাসনে বসেছেন ভুলে গেছেন স্যার? রেফারেন্স লেটার দেওয়ার কারনে এই ৩জনকে চাকরি দিবোনা সিদ্ধান্ত এমন হওয়া উচিত ছিলো।’
প্রবেশপত্রে কোনো সুপারিশের কথা অস্বীকার করলেও মুঠোফোনে উপ-উপাচার্যকে চাকুরীপ্রার্থীর বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন সুপারিশকারী জামায়াতে সাবেক এমপি মো. লতিফুর রহমান। আজ সকালে তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, “চাকুরীপ্রার্থীর প্রবেশ পত্রে সুপারিশ করা হয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। তবে এটা সত্য যে ওই প্রার্থীর বিষয়ে উপ-উপাচার্যকে ফোনে সুপারিশ করা হয়েছিলো। আমি তাকে বলেছিলাম, ‘বিগত দিনে ভাইভাগুলোতে অনেক বাজে চর্চা হয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে আমরা এটা চাই না। আপনি এই প্রার্থীর আবেদনপত্রটা দেখবেন। আবেদনকারীর বিভাগের ফলাফল অনেক ভালো।’ এ বেশি আর কিছু বলতে পারছি না আমি অসুস্থ।”
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ২৪’র গণঅভ্যুত্থানে একটা পরিবর্তন আসলেও আমাদের চিন্তাগত কোনো পরিবর্তন আসেনি। সত্য কথা হচ্ছে, বিভিন্ন দপ্তরে সুপারিশ, তদবির এ গুলো কোনো কিছুই বন্ধ হয়নি। এখনও দপ্তরগুলোতে শত শত তদবির জমা পড়ছে। এই ধরনের খারাপ প্রাকটিস আসলে কোনোটাই পাল্টায়নি। এগুলো মানুষ এখনও করছে যা খুবই দুঃখজনক। তবে আমরা চেষ্টা করছি কোনো ধরেন অন্যায় আবদার, তদবির এবং আর্থিক দুর্নীতিকে কোনো প্রশ্রয় দেব না। মানুশের কাজ মানুষ করবে, আমরা আমাদের মতো করে আমাদের কাজ করার চেষ্টা করছি।
মন্তব্য করুন