রংপুর মহানগরীর সিও বাজারে একটি এলপিজি গ্যাস স্টেশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যু ও অন্তত ১৩ জন গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা শুরু হলেও প্রশ্ন উঠছে স্টেশন পরিচালনার দায়িত্বশীলতা ও নজরদারির ঘাটতি নিয়ে।
গত শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাদের তিন কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম)।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, স্টেশনটি এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ ছিল একটি গ্যাস লিকেজ সমস্যার কারণে। বিস্ফোরণের সময় সেখানে মালিকপক্ষ কূপ মেরামতের জন্য ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছিল। লিকেজ চিহ্নিত করার জন্য কূপে চাপ প্রয়োগ করতেই হঠাৎ করে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্যাস কূপে কোনো গ্যাস না থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে গ্যাস বাষ্প জমে থাকতে পারে, যা ছিল বিস্ফোরণের অন্যতম কারণ। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকার দুই শতাধিক বাড়ি-ঘর, শতাধিক দোকান ও অন্তত ২৫টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিস্ফোরণের ফলে গ্যাস কূপ মেরামতের সহকারী সেলিম রেজা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহতদের মধ্যে কেউ কেউ আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন—ছালেক শাহ (৬৫), তারাজুল (৪৫), সোহেল (৩৭), বিপুল (৫২), রফিক (৩৫), সোহাগ (২৭), বকুল (২৪), মজিবর (৪৫), সাদমান (১৮), রোজী (৫০) এবং আরও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা নারী-পুরুষ।
রংপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক বাদশা মাসউদ আলম বলেন, “কূপে লিকেজ পরীক্ষা করতে গিয়েই বিস্ফোরণ ঘটে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ চলছে। মালিকপক্ষের গাফিলতি ছিল কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, এ পর্যন্ত স্টেশন মালিকপক্ষের কেউ গণমাধ্যম বা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ঘটনার পরপরই পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এবং বাড়ানো হয় নিরাপত্তা।
স্থানীয়রা মনে করছেন, এত বড় দুর্ঘটনার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিয়মিত তদারকি না থাকলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে। প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি এখন নজরদারির অভাব, মালিকপক্ষের গাফিলতি এবং স্টেশনের লাইসেন্স-রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে কাজ করছে।
মন্তব্য করুন