জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার (১৪ জুলাই)। ২০১৯ সালের এই দিনে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি মারা যান। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রংপুরসহ সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে জাতীয় পার্টি ও দলের অঙ্গসংগঠনগুলো।
আজ সকাল ৮টায় ঢাকায় কাকরাইলের জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোরআন খতম অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সকাল ৯টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এদিন বিকেল ৪টায় আলোচনা শেষে কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শোকযাত্রা হবে।
এদিকে আজ রাজধানীর বারিধারার ডিপ্লোমেটিক জোনে এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট পার্কে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছেন এরশাদপুত্র এরিক এরশাদ। এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদ আজ এই অনুষ্ঠানসহ একাধিক অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির বিষয়ে নতুন বার্তা দেবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া সারাদেশে জাতীয় পার্টি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হবে।
জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির জানিয়েছেন, এরইমধ্যে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা রংপুরে এসেছেন।
তিনি আরও জানান, এই দিন উপলক্ষে সকাল ৬টায় রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, সকাল ৬টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কোরআন তিলাওয়াত মাইকযোগে প্রচার, বেলা ১১টায় নগরীর পল্লীনিবাসে সমাধি অঙ্গনে কোরআন তিলাওয়াত, সাবেক রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন সময়ের ভাষণ প্রচার, কবর জিয়ারত, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও তবারক বিতরণ, বাদ আসর রংপুর নগরীর বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায় দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ২০ মার্চ বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় তার নানার বাড়িতে জন্ম নেন। তার পৈতৃক নিবাস অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমা শহরে। তার বাবার নাম মৌলভি
মকবুল হোসেন। পরে তারা কোচবিহার থেকে রংপুরে চলে আসেন।
পল্লীজীবনের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন এরশাদ। দীর্ঘ নয় বছর রাষ্ট্রপ্রধান থাকায় বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের উন্নয়নেও অবদান রেখেছেন তিনি।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ২০ মার্চ বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় তার নানার বাড়িতে জন্ম নেন। তার পৈত্রিক নিবাস অবিভক্ত ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমা শহরে।
তার বাবার নাম মৌলভী মকবুল হোসেন। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা আইনজীবী। তার দাদা মৌলভী শাহাদৎ হোসেনও ছিলেন একজন প্রখ্যাত আইনজীবী এবং তিনিই ছিলেন কুচবিহার অঞ্চলের প্রথম মুসলিম আইনজীবী। এরশাদের মায়ের নাম মজিদা খাতুন।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন ৯ ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় এবং চার ভাইয়ের মধ্যে প্রথম। তার ডাকনাম ছিল পেয়ারা। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দিনহাটায়। দিনহাটা হাইস্কুল থেকে তিনি ১৯৪৬ সালে মেট্রিক পাস করেন।
মেট্রিক পাসের পর দিনহাটা ছেড়ে এরশাদ ১৮৪৬-৪৭ শিক্ষাবর্ষে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন। এ কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ক্রীড়া ও সাহিত্য উভয় ক্ষেত্রে সমানভাবে যুক্ত হন।
১৯৫০ সালে তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ পাস করেন। পরে তার বাবার ইচ্ছায় তিনি এমএ পড়তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি হন।
১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের কোহাট সেনানিবাসে পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ময়মনসিংহের স্বনামধন্য খান সাহেব উমেদ আলী সাহেবের কন্যা রওশন আরা ডেইজিকে বিয়ে করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে পশ্চিম পাকিস্তানে আটকা পড়েন তিনি। ১৯৭৩ সালে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে তিনি আবার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
১৯৭৯ সালের ৭ নভেম্বর তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদোন্নতি পান। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার তার মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত ঘোষণা করে সামরিক আইন জারির মাধ্যমে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে সেনাপ্রধান হিসেবে এরশাদ ১৯৮৪ সালের ২৪ মার্চ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন।
১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি জাতীয় পার্টি গঠন করেন এবং তিনি এ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে রাজনীতি এবং সাংগঠনিক যাত্রা শুরু করেন। রাজনৈতিক দল গঠনের পর তিনি দেশে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ১৯৮৬ সালের ৭ মে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩ আসনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়।
১৯৮৬ সালের অক্টোবর মাসে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের রাষ্ট্রপতি হন এরশাদ। ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর তিনি জাতীয় সংসদে ভাষণ দিয়ে সামরিক আইন তুলে দেন।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.