মরুভূমির প্রাণী দুম্বার ভিন্নধর্মী খামার এখন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরির পাশাপাশি নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গড়ে তোলেন দুম্বার খামার। সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের দড়ি জামালপুর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা জাহিরুল ইসলাম জাহিদ সৌখিনতা থেকেই খামার শুরু করলেও এখন তার স্বপ্ন-দেশব্যাপী দুম্বা ছড়িয়ে দেওয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহিরুল ইসলাম জাহিদ দিনাজপুর সদর উপজেলায় ব্র্যাক এনজিওতে চাকরি করছেন। সেখানকার বোচাগঞ্জের হান্নান মিয়া নামের এক উদ্যোক্তার দুম্বার খামার ভিজিট করেন। সেই থেকে নিজেও এই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এরপর প্রাথমিক অভিজ্ঞতায় গত সাতমাস আগে এজেন্টের মাধ্যমে ভারত থেকে তুর্কি জাতের একটি পাঠাসহ পাঁচটি দুম্বা কিনেছেন। তার দাম সাড়ে ৮ লাখ টাকা। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী মাচা পদ্ধতি এপশু পালন শুরু করেন জাহিদ। এরই মধ্যে পেয়েছেন একটি বাচ্চা। আরও তিনটি গাভিন (গর্ভ) হয়েছে। আর কিছুদিন পরই সেগুলো প্রসব করবে। এ অবস্থায় ধীরে ধীরে খামার সম্প্রসারণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ থেকে নিজে স্বাবলম্বী হওয়াসহ অন্যদেরও কর্মসংস্থানের আশা করছেন এ তরুণ উদ্যোক্তা জাহিদ মণ্ডল।
বর্তমানে তার খামারে থাকা একেকটি দুম্বার ওজন ৭৫ থেকে ১২০ কেজি পর্যন্ত। এসব দুম্বার প্রতিটির বাজারমূল্য আড়াই লাখ থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ছয় মাস বয়সী একটি বাচ্চা দুম্বার দাম পড়ে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। খামারে প্রতিদিন রুটিন মাফিক দুম্বাদের খাওয়ানো হয় ঘাস, খড়, পাতা, ভূষি ও সরিষা খৈল। শান্ত স্বভাবের প্রাণী হওয়ায় দুম্বা পালন বেশ সহজ বলে জানান জাহিদ ও তার ভাই জিন্নাহ। তারা বলেন, দুম্বার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় চিকিৎসা খরচও খুব কম।
স্থানীয়রা বলছেন, দুম্বা মরু অঞ্চলের প্রাণী হলেও বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে দুম্বা পালন শুরু হয়েছে। এরই ধারবাহিকতায় কয়েক মাস আগে পাঁচটি দিয়ে খামার শুরু করেছেন জাহিদ মণ্ডল। এখানে প্রতিদিন উৎসুক জনতা আসেন। এই প্রথম নিজ চোখে দুম্বা দেখতে পেয়ে অনেকটা আনন্দিত ও পালনে আগ্রহ জাগছে তাদের। বর্তমানে জাহিদ মণ্ডলের ব্যবস্থাপনায় খামার দেখাশুনা করছেন-তার মা পারভীন বেগম ও ছোট ভাই জিন্না মণ্ডল। তারা নিয়ম অনুযায়ী দুম্বাগুলোকে খাদ্য ও গোসল দেওয়াসহ সার্বিকভাবে লালন-পালন করছেন।
এ বিষয়ে পারভীন বেগম বলেন, ছেলে জাহিদের দিকনির্দেশনায় মাসে দুইবার দুম্বাগুলোকে গোসলা করানো হয়। সেডঘরের বাইরে আবদ্ধ প্রাচীর মধ্যে আঙ্গিনায় দলবদ্ধ হয়ে ঘুরে বেড়ায় এ প্রাণীগুলো। তা সার্বক্ষণিক দেখাশুনো করতে হয়। খাদ্য সম্পর্কে জিন্না মণ্ডল বলেন, দুম্বাকে পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করতে খাবারের ব্যবস্থাপনা জরুরি। এ প্রাণীকে দানাদার খাবার যেমন- খড়, ভুসি, ঘাস প্রভৃতি দিতে। পরিমাণভাবে দিনে ৩ বার খাবার দিতে হয়। তবে গরু-ছাগলের চেয়ে সহজে দুম্বা পালন করা যায়।
এ প্রসঙ্গে নতুন এই উদ্যোক্তা জাহিরুল ইসলাম জাহিদ বলেন, শখ ছিল যে আমি ব্যতিক্রম কিছু একটা করব। আমি যদি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে সবাই এ দুম্বা কিনে কোরবানি ঈদে কোরবানি দিতে পারবে। যেহেতু এটা সুন্নতি প্রাণী, এ উদ্দেশ্য নিয়ে আমার যাত্রা করা। তিনি আরও বলেন, আমি দুম্বা পালন করলেও এখন পর্যন্ত প্রাণিসম্পদ অফিসের কোনো সহযোগিতা পাইনি। সরকারিভাবেভাবে সহযোগিতা পেলে আমার এই খামারটি সম্প্রসারণ করে যুবকদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পাতাম। উদ্যোক্তা জাহিদের বিশ্বাস, প্রান্তিক পর্যায়ে দুম্বা ছড়িয়ে দেওয়া গেলে ভবিষ্যতে দেশে দুম্বার চাহিদা ও বাজার আরও সমৃদ্ধ হবে। যথাযথ পরিকল্পনা ও পরিচর্যা থাকলে দুম্বা খামার গড়ে তোলা এক লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে।
এ ব্যাপারে সাদুল্লাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, দুম্বা পালন বেশ লাভজনক। জাহিদ নামের যুবক দুম্বার খামার করেছে সেটি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে তাকে সহযোগিতা চেষ্টা করা হবে। জাহিদ সফল হোক। তার দেখাদেখি অনেকে উদ্যোক্তা এখানে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.