গাইবান্ধার ফুলছড়ির লাল শুকনো মরিচের কদর রয়েছে দেশব্যাপী। এসব মরিচ বিক্রির জন্য জেলার ফুলছড়ির ব্রহ্মপুত্র নদের ঘাটে সপ্তাহে দু-দিন বসে মরিচের হাট। এ হাট এখন লাল মরিচের আমদানিতে রঙিন হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রেতা, বিক্রেতাদের কেনাবেচায় সরব মরিচের হাট। প্রত্যেক হাটে বিক্রি হচ্ছে প্রায় দু-কোটি টাকার লাল মরিচ।
ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদী বেষ্টিত জেলার চার উপজেলার ১৬৫টি চরে মরিচের ব্যাপক ফলন হয়ে থাকে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের উৎপাদিত অন্যতম অর্থকরী ফসল মরিচ কেনা-বেচার জন্য ফুলছড়ির ব্রহ্মপুত্র নদের ঘাটে বসে এ মরিচের হাট। প্রতি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ হাটে চলে মরিচ বেচাকেনা।
ভোরের আলো ফুটতেই নৌকা, ঘোড়ার গাড়ি ও কাঁধে মরিচ নিয়ে দলে দলে হাটে আসতে শুরু করেন বিভিন্ন চরের মরিচ চাষীরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ক্রেতাদের হাক ডাকে মুখর উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ এ হাট চত্বর। লাল টুকটুকে মরিচে সাজানো বস্তায় কাণায় কাণায় ভরা মরিচের হাট।
গুণগত মানসম্পন্ন এই মরিচের ব্যাপক উৎপাদন হওয়ায় দেশের বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি ও বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যান এ এলাকার লাল মরিচ। পাইকাররা মরিচ কিনে সরবরাহ করেন ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ বছর প্রতিমণ শুকনো মরিচ প্রকার ভেদে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চরাঞ্চলে অল্প খরচে অধিক লাভ পাওয়ায় ও সহজে হাটে বিক্রি করতে পেরে জেলায় বাড়ছে প্রতি বছর মরিচের আবাদ।
তবে হাটে আসা ক্রেতা, বিক্রেতা ও ইজারাদারের অভিযোগ, উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এ মরিচের হাট থেকে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করলেও হাটে নেই কোন সেট ও গুদাম ঘর। খোলা আকাশের নিচে রোদ বৃষ্টিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। বগুড়া থেকে ফুলছড়ি হাটে মরিচ কিনতে এসেছেন জয়নাল ব্যাপারী। তিনি বলেন, ভোরবেলা ট্রাক নিয়ে এ হাটে মরিচ কিনতে এসেছি। ফুলছড়ির মরিচ ভালোমানের। প্রতি হাটে ৩০ থেকে ৪০ মণ মরিচ কিনে নিয়ে যাই। এরপর তা আমাদের স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করি।
জয়পুরহাট থেকে পাইকারি মরিচ কিনতে আসা ব্যাপারী জুয়েল মিয়া বলেন, প্রতি বছরই এ হাট থেকে শুকনো মরিচ কিনে জয়পুরহাটে বিভিন্ন হাট-বাজারের বিক্রি করে থাকি। পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানিকে দিয়ে থাকি। এখানকার মরিচ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। এই হাটে মরিচের মান ভালো। কিন্তু দাম কিছুটা চড়া।
ফুলছড়ি হাটের ইজারাদার বজলুর রহমান মুক্তা জানান, সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার দু-দিন সকাল ৭টা থেকে হাট বসে। এবার প্রতি মণ মরিচ ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হাটে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার মণ শুকনো মরিচ বিক্রি হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, আবহাওয়া ও মাটি উর্বর হওয়ায় চরাঞ্চলে মরিচ চাষের পরিমাণ বাড়ছে। চরের লোকজনও মরিচ চাষে ঝুঁকছেন। তাঁরা মরিচ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শসহ সব ধরনের সুযোগ- সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ২ হাজার ৫শ ২৮ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৪০ মেট্রিক টন। ২শ ১০ কোটি টাকার মরিচ বিক্রির আশা করছেন এ এলাকার কৃষকরা।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.