চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে কলকাঠি নাড়ার যে দাবি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করেছেন, তা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার সম্পর্কে ফাটল তৈরি হয়েছে। এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাতের অবসান ঘটাতে ট্রাম্পের আকস্মিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণার এক সপ্তাহ পর, যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া নিয়ে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মতভেদ দেখা দিয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ হর্ষ ভি পান্ত বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসন ভেবেছিল, ট্রাম্পের ভূমিকা তুলে ধরার ক্ষেত্রে (যুদ্ধের) এই পর্যায়ে হস্তক্ষেপ তাদের কিছু মৌলিক সুবিধা দিতে পারে।
নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংকট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে যে এটা চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।’
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহতের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। জবাবে পাকিস্তানও ভারতে পাল্টা হামলা করে। হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের সমর্থনের জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে নয়াদিল্লি।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে পাকিস্তান। উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় প্রায় ৭০ জন নিহত হওয়ার পর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন ট্রাম্প।
পরে ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানকে দুর্দশার কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য গর্ব করে গত শুক্রবার ফক্স নিউজকে বলেন, ‘আমাকে কৃতিত্ব দেওয়া হবে এমন যেকোনো সাফল্যের চেয়েও এটি অনেক বড়।’
ইসলামাবাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে বিদেশি মধ্যস্থতাবিরোধী নীতি মেনে আসছে ভারত।
কয়েক দশক ধরে মেনে চলা এই নীতির বিরুদ্ধে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য এড়িয়ে গেছে নয়াদিল্লি।
বিভক্ত কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের দাবি করে আসছে ভারত ও পাকিস্তান। নয়াদিল্লি হিমালয় অঞ্চলকে নিজের অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে করে। এ ছাড়া বহিরাগত মধ্যস্থতাকে দুর্বলতা মনে করেন রাজনীতিকরা।
যুদ্ধবিরতির পর মোদির প্রথম ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
তার সরকার তখন থেকেই জোর দিয়ে বলে আসছে, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা সম্পূর্ণ দ্বিপক্ষীয়। বাণিজ্যিক চাপ যুদ্ধবিরতিকে ত্বরান্বিত করেছে বলে যে দাবি ট্রাম্প করেছেন, তা প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বাণিজ্যের বিষয়টি আসেনি।
ওআরএফের ফেলো মনোজ জোশির মতে, কৌশলগত অবস্থান এবং বিশাল বাজার ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্রে পরিণত করেছে। তাই ট্রাম্পের বক্তব্য ভারতের জন্য বিরক্তিকর। তিনি বলেন, ‘কিন্তু ভারত খুব সতর্ক হচ্ছে। কারণ তারা উচ্চ শুল্ক এড়াতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি বাণিজ্যচুক্তির বিষয়ে আলোচনা করছে। আমরা চাইব যে এজেন্ডাটি ভিন্ন দিকে এগিয়ে যাক।’
অভ্যন্তরীণভাবেও বিষয়টি জটিল। কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা সম্পর্কিত নীতি ভারত পরিবর্তন করছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।
এর আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুর্বল প্রতিক্রিয়া দেখানোয় কংগ্রেসের সমালোচনা করেছেন মোদি। তাই ভারত স্পষ্টতই এর জবাব দেবে এবং তা অস্বীকার করবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ইউরেশিয়া গ্রুপের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষক প্রমিত পাল চৌধুরী।
প্রমিত বলেন, ‘ট্রাম্পের দাবিকৃত মধ্যস্থতাকে স্বাগত জানিয়েছে ইসলামাবাদ। কারণ সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ দেওয়ার জন্য মার্কিন হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.