যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় বসবাসকারী প্রায় ২১ লাখ ফিলিস্তিনি মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের গুরুতর ঝুঁকিতে রয়েছে, এমন তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়ন সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)।
গাজার বাসিন্দারা বর্তমানে ‘চরম খাদ্য সংকটের’ মুখোমুখি। সেখানে অব্যাহত ইসরাইলি অবরোধের কারণে খাদ্য, ত্রাণ এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। আইপিসি এর প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে গাজার খাদ্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে এবং বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা খারাপের দিকে যাচ্ছে।
আইপিসি একটি জাতিসংঘ, দাতা সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের সমন্বয়ে পরিচালিত সংস্থা। তারা গাজার খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে মূল্যায়ন করে দেখিয়েছে যে, সেখানে প্রায় দুই লাখ ৪৪ হাজার মানুষ এখন ‘তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার’ সম্মুখীন। তাদের দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি মোকাবেলা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মার্চের শুরু থেকে গাজায় আবারও ইসরাইলি সামরিক অভিযান শুরু হওয়ায়, খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছাতে পারে না। ইসরাইল দাবি করেছে, তারা হামাসের হাতে আটক নাগরিকদের মুক্তি পাওয়ার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল এর কঠোর বিরোধিতা করেছে।
আইপিসি জানিয়েছে, গাজার প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন, অর্থাৎ প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ অনাহারের মুখে পড়ছে। ২০২৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৭১ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইসরাইল মানবিক সহায়তার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে, তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই গাজা সীমান্তে ত্রাণ সামগ্রী প্রস্তুত রেখেছে এবং ইসরাইলের বাধা না থাকলে তা দ্রুত পৌঁছে দেওয়া যাবে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ত্রাণ সহায়তার ওপর অবরোধ এবং গাজাবাসীদের ‘অনাহারে রাখার নীতি’ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
গাজার পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী সংঘাতে ঘেরা অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটের প্রতিফলন। বর্তমানে গাজার ৯৩ শতাংশ জনসংখ্যা তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যার মধ্যে দুই লাখ ৪৪ হাজার মানুষ খাদ্য সংকটের সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে।
ইসরাইলের বিরোধিতার পরও হামাস ত্রাণ সহায়তা প্রবাহে একটি সমঝোতা চাচ্ছে। এছাড়া, গাজার ৫৮০ দিন ধরে বন্দী আমেরিকান-ইসরাইলি নাগরিক আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ইসরাইলের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, তারা গাজার সব এলাকা দখল করার পরিকল্পনা করছে, এবং ত্রাণ বিতরণে নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিকল্পনাকে আস্তিনে ত্রাণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার আশঙ্কা করছে।
হামাস এখনও ৫৯ জন জিম্মি রাখা রয়েছে, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন জীবিত রয়েছে। অক্টোবরের হামলার পর ৫২ হাজার ৮৬২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে।
এভাবে চলতে থাকলে গাজায় খাদ্য, ওষুধসহ অন্যান্য মানবিক সহায়তার চরম সংকট তৈরি হতে পারে এবং আগামী দিনে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করা হচ্ছে।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.