ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি শুরু হওয়া ড্রোন যুদ্ধকে ‘নতুন অধ্যায়ের’ সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার, ভারত অভিযোগ করে যে পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ড ও ভারত শাসিত কাশ্মীরের তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং পাল্টা দাবি করেছে, তারা ২৫টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ‘টিট-ফর-ট্যাট’ হামলার নীতি একটি বিপজ্জনক নতুন অধ্যায় তৈরি করেছে, যেখানে উভয় পক্ষই অস্থিতিশীল সীমান্তে শুধুমাত্র গোবারুদ নয়, ড্রোনের মতো মানবহীন অস্ত্রও ব্যবহার করেছে।
বিশ্বের ক্ষমতাশালী দেশগুলো যখন ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সংযম প্রদর্শনের’ আহ্বান জানাচ্ছে, তখন ড্রোন ব্যবহার করে এই দুই দেশের উত্তেজনা বৃদ্ধি একটি ‘নীরব’ সংঘাতের সূচনা করেছে। ‘ইউএস নেভাল ওয়ার কলেজ’-এর অধ্যাপক জাহারা মাতিসেক বিবিসিকে বলেছেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ড্রোন সংঘর্ষ একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে, যেখানে অদৃশ্য চোখ এবং মানবহীন পদ্ধতিগুলি উত্তেজনা বা সংযম নির্ধারণ করতে সক্ষম’।
পাকিস্তান প্রথমে অভিযোগ করে যে, গত বুধবার সকাল থেকে তাদের দেশে ভারতীয় বিমান হামলা ও সীমান্তে গোলাগুলির ফলে ৩৬ জন নিহত এবং ৫৭ জন আহত হয়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে অন্তত ১৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, পেহেলগাম হামলার জবাবে তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তবে ইসলামাবাদ এ হামলার সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছে।
পাকিস্তান তাদের দাবি অনুযায়ী, করাচি, লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডির মতো শহরে ২৫টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে, যেগুলো ইসরাইলের তৈরি ‘হারোপ’ ড্রোন। ভারত দাবি করেছে, তারা পাকিস্তানের কিছু বিমান প্রতিরক্ষা রাডার ও সিস্টেম নিষ্ক্রিয় করেছে, তবে ইসলামাবাদ এসব দাবিকে খারিজ করেছে।
ড্রোন ও ‘আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকলস’ (ইউএভি) আধুনিক যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ড্রোনগুলো সামরিক অভিযানের নির্ভুলতা এবং দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভারত ও পাকিস্তান তাদের ড্রোন বাহিনীকে আরও উন্নত করেছে, যেমন ভারতীয় ড্রোন বহরে রয়েছে ‘আইএআই সার্চার’, ‘হেরন’, ‘হার্পি’, এবং ‘হারোপ’। পাকিস্তানও চীন, তুরস্ক, এবং দেশীয় প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি ড্রোনের বহর তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের ড্রোনের ব্যবহারের কৌশলও বিকশিত হয়েছে, এবং তারা বিমানের আক্রমণের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ড্রোন ব্যবহার করে। পাকিস্তানও তাদের ড্রোন প্রযুক্তি বিকশিত করছে, যার মধ্যে ‘লয়াল উইংম্যান ড্রোন’ অন্যতম, যা মনুষ্যবাহী বিমানের সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম।
বিভিন্ন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের ড্রোন ব্যবহার মূলত ‘প্রিশিসন-স্ট্রাইক’ (লক্ষ্যবস্তুকে নিখুঁতভাবে আঘাত করা) করছে, যাতে সীমান্ত অতিক্রম না করে আক্রমণ চালানো যায়। তবে, এই নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে উত্তেজনার পরিবেশ আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। অধ্যাপক জাহারা মাতিসেক জানান, ‘ড্রোন রাজনৈতিক ও অপারেশনাল অ্যাকশনের সীমাকে কমিয়ে দেয়, তবে তারা উত্তেজনা বৃদ্ধির নতুন গতিশীলতা তৈরি করতে পারে, যেখানে প্রতিটা ড্রোন ভূপাতিত করা এবং প্রতিটা রাডার বন্ধ করা নতুন সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে’।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে ড্রোনের ভূমিকা সীমিত থাকলেও, এর মাধ্যমে উত্তেজনা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তবে, এই পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে বৃহত্তর সংঘাতের সূচনা হতে পারে, যা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য গভীর প্রভাব ফেলবে।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.