জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) একটি ইন-ক্যামেরা বৈঠকে পাকিস্তান অভিযোগ করেছে যে, ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আসিম ইফতিখার বলেন, ভারতের সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ ইসলামাবাদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে পহেলগাঁও হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে।
রাষ্ট্রদূত ইফতিখার জানান, কাশ্মীর বিরোধ আজও অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে, যা ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে। তিনি বলেন, এটি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে প্রধান বিরোধ, যার শান্তিপূর্ণ সমাধান কাশ্মীরিদের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতেই হতে হবে। কাশ্মীরিদের সম্পৃক্ততা ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।
কাশ্মীরের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে (আইআইওজেকে) এখনো নিরীহ মানুষ ভারতীয় বাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
পহেলগাঁও হামলা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, পাকিস্তানের এই ঘটনায় কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং দেশটি একটি স্বাধীন, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দেন যে, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তান ফ্রন্টলাইন রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করেছে এবং ৯০,০০০-এরও বেশি জীবন উৎসর্গ করেছে।
সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ভারতীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই শান্তি নিশ্চিত করতে হলে নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, পাকিস্তান সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি চায়, কারণ সংলাপই শান্তির একমাত্র টেকসই পথ। তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে এই বৈঠক আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও উত্তেজনা প্রশমনের উপায় নিয়েই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকের শুরুতে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব (মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) খালেদ খিয়ারি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশে বর্তমান পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। পরে রাষ্ট্রদূত ইফতিখার কাশ্মীর ও পানি ইস্যুতে বিস্তারিতভাবে বক্তব্য দেন।
বৈঠকের আগেই জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ভারত ও পাকিস্তানকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কাশ্মীরে সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.