পহেলগাঁও হামলার ঘটনায় ভারতের একতরফা অভিযোগের প্রেক্ষিতে জবাব দিল পাকিস্তান। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অকাট্য প্রমাণ হাতে পেয়েছে।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, বেলুচিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশে সন্ত্রাস চালানোর তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি জানান, সম্প্রতি পাকিস্তানি নাগরিক ‘আব্দুল মজিদ’-কে আটক করা হয়েছে, যিনি ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ২৫ এপ্রিল ঝিলাম বাস স্ট্যান্ডের কাছে তাকে আটক করা হয়।
আব্দুল মজিদের কাছ থেকে একটি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), দুটি মোবাইল ফোন এবং ৭০ হাজার রুপি উদ্ধার করা হয়। পরে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও ১০ লাখ রুপি এবং একটি ভারতীয় ড্রোন জব্দ করা হয়েছে।
জেনারেল চৌধুরী বলেন, এই অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগকারী ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার সুবেদার সুখবিন্দার। তাকেই নির্দিষ্ট স্থানে বিস্ফোরক সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। উদ্ধার হওয়া উপকরণগুলোর ফরেনসিক বিশ্লেষণে এমন সব তথ্য পাওয়া গেছে, যা যে কোনো নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থা যাচাই করে দেখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এটি ভারতের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসবাদের একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ মাত্র। অথচ পহেলগাঁও হামলার পর কোনো তদন্ত ছাড়াই ভারত একতরফাভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে, যা অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক চাপ থেকে জনগণের দৃষ্টি সরানোর উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভারতের কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁও এলাকায় গত সপ্তাহে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এরপর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ তোলে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত সিন্দু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে এবং আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত পারাপার বন্ধ করে দেয়। এছাড়া, পাকিস্তানে নিযুক্ত প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার করে এবং ইসলামাবাদে থাকা কূটনৈতিক কর্মীদের সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ জনে আনার সিদ্ধান্ত নেয়।
এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ভারতের বিমান চলাচলের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে বলা হয়, সিন্দু পানি চুক্তি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যা বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় কার্যকর হয়েছে। এটি একতরফাভাবে স্থগিত করার কোনো বৈধতা নেই। পানির প্রবাহ রোধ করার প্রচেষ্টা পাকিস্তানের ২৪ কোটি মানুষের জীবনরেখা হুমকির মুখে ফেলার শামিল এবং তা যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য—যার জবাব দেওয়া হবে জাতীয় শক্তির সর্বস্তর থেকে।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.