পৃথিবীর বাইরেও প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে—এবার সেই সম্ভাবনার সবচেয়ে শক্তিশালী ইঙ্গিত দিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা এমন একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করেছেন, যা পৃথিবীতে শুধুমাত্র জীবিত প্রাণীর মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়। এই আবিষ্কারে বৈজ্ঞানিক মহলে একদিকে যেমন উত্তেজনা ছড়িয়েছে, তেমনি রয়েছে সাবধানতা ও গভীর বিশ্লেষণের আহ্বানও।
সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এই অভাবনীয় আবিষ্কারটি করা হয়। গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক নিক্কু মাধুসূদন জানান, "আমরা প্রথমবারের মতো এমন একটি ভিনগ্রহের সন্ধান পেলাম, যেখানে প্রাণের উপস্থিতি সম্ভব হতে পারে। এটি এক যুগান্তকারী মুহূর্ত।"
যে গ্রহটি প্রাণের সম্ভাবনা প্রদর্শন করেছে, তা পৃথিবী থেকে ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এবং লিও নক্ষত্রমণ্ডলে অন্তর্ভুক্ত। গ্রহটির নাম ‘কে২-১৮বি’। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৮.৬ গুণ ভারী এবং আকারে ২.৬ গুণ বড়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই গ্রহটি সূর্যের এমন এক অঞ্চলে অবস্থান করছে যাকে বলা হয় ‘গোল্ডিলকস জোন’, যেখানে তরল পানি থাকার জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা থাকে। এর মানে হলো, এই গ্রহে প্রাণ ধারণের পরিবেশ থাকতে পারে।
২০২৩ সালে, বিজ্ঞানীরা গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে মিথেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড খুঁজে পান। এই প্রথমবার কোনো বাসযোগ্য অঞ্চলের গ্রহে কার্বনভিত্তিক অণুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যা প্রাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ধারণা, গ্রহটির পৃষ্ঠে একটি মহাসাগর থাকতে পারে এবং তার ওপর হাইড্রোজেনসমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল রয়েছে।
এবার, বিজ্ঞানীরা এমন উপাদান পেয়েছেন যা শুধুমাত্র প্রাণী দ্বারাই তৈরি হয়। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের সাহায্যে তারা গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে ডাইমেথাইল সালফাইড ও ডাইমেথাইল ডিসালফাইডের উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন। পৃথিবীতে এই যৌগগুলো উৎপাদন করে মেরিন ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন নামক সামুদ্রিক অণুজীব। এছাড়া, গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে এই রাসায়নিকগুলোর ঘনত্ব পৃথিবীর চেয়ে হাজার গুণ বেশি বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গবেষণাটি অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারস এ প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি একটি পিয়ার-রিভিউড জার্নাল, অর্থাৎ অন্যান্য বিজ্ঞানীও গবেষণাটিকে নির্ভরযোগ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে, বিজ্ঞানীরা সরাসরি বলছেন না যে তারা প্রাণ খুঁজে পেয়েছেন। অধ্যাপক মাধুসূদন জানিয়েছেন, "এই রাসায়নিকগুলো অজানা কোনো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও সৃষ্টি হতে পারে।"
এটি প্রথমবার নয়, যখন ভিন্ন গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা শনাক্ত করা হলো। ২০১১ সালে, নাসা গবেষকরা এন্টার্কটিকায় পড়া উল্কাপিণ্ডে ‘ডিএনএ’-এর উপাদান খুঁজে পেয়েছিলেন। এর পর, ২০১২ সালে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি দূরবর্তী নক্ষত্রমণ্ডলে চিনির অণু খুঁজে পান, যা ‘আরএনএ’ তৈরির জন্য অপরিহার্য।
গবেষণার প্রধান নিক্কু মাধুসূদন জানান, "এখন থেকে কয়েক দশক পর আমরা হয়তো ফিরে তাকিয়ে দেখব, এই সময়টাই সেই মুহূর্ত ছিল, যখন আমাদের সামনে প্রথমবারের মতো ‘জীবন্ত মহাবিশ্ব’ ধরা দিয়েছিল।" বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, আগামীতে আরও বিস্তর গবেষণার মাধ্যমে, মহাবিশ্বে প্রাণের অস্তিত্বের এই নতুন সম্ভাবনা আরও নিশ্চিত হবে।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.