একজন মায়ের জন্য সন্তানের সুষম খাদ্য নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শৈশব ও কৈশোরকাল হচ্ছে শরীরের গঠন, বিকাশ ও সুস্বাস্থ্যের ভিত্তি নির্মাণের সময়। এই সময় সঠিক পুষ্টি গ্রহণ ভবিষ্যতের সুস্থ জীবনযাপনের পথ প্রশস্ত করে। এর মধ্যে ক্যালসিয়াম এমন একটি পুষ্টি উপাদান, যা শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠন এবং শক্তি বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
শুধু হাড় বা দাঁতের গঠনই নয়, ক্যালসিয়াম পেশি, স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোন নিঃসরণের সঠিক কার্যকারিতার জন্যও জরুরি। বয়ঃসন্ধিকালে হাড়ের বৃদ্ধি দ্রুত হয়, আর এই সময় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে অস্টিওপোরোসিস, হাড়ের দুর্বলতা ও কিডনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই শিশুর খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।
১. দুগ্ধজাত দ্রব্য:
দুধ, দই, পনির — এগুলো ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে সমৃদ্ধ উৎস। একটি গ্লাস দুধে প্রায় ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। দুধ পছন্দ না করলে দই বা চিজ ব্যবহার করা যায়। স্মুদি বা ফলের সঙ্গে দই মিশিয়ে দিলে শিশুরা সহজেই গ্রহণ করে।
২. কমলা:
কমলা শুধু ভিটামিন C-ই নয়, বরং ক্যালসিয়ামেরও ভালো উৎস। একটি মাঝারি কমলায় প্রায় ৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। কমলার রস বা পুরো ফল হিসেবে এটি দেওয়া যেতে পারে।
৩. বাদাম:
বাদামে যেমন মস্তিষ্কের জন্য উপকার, তেমনি এটি ক্যালসিয়ামেরও দারুণ উৎস। ১/৩ কাপ বাদামে প্রায় ১১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। বাদাম মাখন বা মিল্কশেকে ব্যবহার করতে পারেন। তবে অ্যালার্জির ঝুঁকি থাকলে সতর্ক থাকতে হবে।
৪. সবুজ শাকসবজি:
পালংশাক, ব্রকলি, ফরাসি মটরশুটি ইত্যাদি ক্যালসিয়ামে ভরপুর। রান্না করা এক কাপ পালংশাকে প্রায় ২৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। স্যুপ, স্টির-ফ্রাই, বা পাস্তায় মিশিয়ে শিশুর খাবারে সহজে যোগ করা যায়।
৫. মটরশুটি ও মসুর ডাল:
ছোলা, সয়াবিন, কিডনি বিনস ও অন্যান্য ডালজাতীয় খাবারে ক্যালসিয়াম থাকে। রান্না করা এক কাপ ছোলায় প্রায় ৮০–১০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। তরকারি বা সালাদের সঙ্গে পরিবেশন করা যায়।
৬. শস্যদানা:
রাগী, বজরা, বাদামি ভাত — এগুলো শক্তির পাশাপাশি ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে। রাগীতে প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৩৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। রাগীর পোরিজ বা রুটি করে দিতে পারেন।
৭. মাছ ও মাংস:
সার্ডিন, টুনা, চিংড়ি ও সালমনের মতো মাছ এবং মুরগি বা লাল মাংসেও প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। ছোট ক্যান সার্ডিনে প্রায় ৩৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এগুলো স্যুপ, গ্রিল বা কারি আকারে উপস্থাপন করা যায়।
৮. তিলের বীজ:
এক টেবিল চামচ তিলে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। রুটি, সালাদ বা পাস্তায় ছিটিয়ে দেওয়া যায়। তিলের পেস্ট (তাহিনি) বানিয়ে শিশুদের খাবারে মেশানোও ভালো উপায়।
৯. ডিম:
ডিম প্রোটিন ও ভিটামিনের পাশাপাশি ক্যালসিয়ামেরও উৎস। একটি ডিমে প্রায় ৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। সিদ্ধ, স্ক্র্যাম্বল বা অমলেট আকারে শিশুকে দেওয়া যায়।
ব্রেকফাস্টে: দুধ দিয়ে তৈরি স্মুদি, চিজ টোস্ট বা রাগী পোরিজ।
লাঞ্চে: ডাল, সবজি ও রুটি বা রাগীর রুটি, সাথে সালাদে তিল ছিটিয়ে দেওয়া যায়।
নাস্তা হিসেবে: কমলা, বাদাম মাখন দেওয়া ক্র্যাকার বা দই।
ডিনারে: মাছ/মুরগির স্টু, শাকসবজি ও ভাত।
রেসিপি তৈরি করতে হলে শিশুর বয়স ও পছন্দ বিবেচনায় রেখে সহজ, সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে পরিবেশন করাই সবচেয়ে ভালো।
১–৩ বছর: ৭০০ মিলিগ্রাম
৪–৮ বছর: ১০০০ মিলিগ্রাম
৯–১৮ বছর: ১৩০০ মিলিগ্রাম
এ চাহিদা পূরণে শুধুমাত্র খাদ্য নয়, পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ও ভিটামিন ‘ডি’-এর উৎসও নিশ্চিত করতে হবে, কারণ এটি ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে।
ক্যালসিয়াম শিশুর হাড়, দাঁত ও সামগ্রিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। খাবারের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম দেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর উপায়। শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য এই পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করতে মায়েদের সচেতনভাবে বৈচিত্র্যময় খাবার পরিকল্পনা করা উচিত।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.