পবিত্র নগরী হেবরনের কেন্দ্রে অবস্থিত ইবরাহিমি মসজিদ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর নামে নামকরণ করা এই মসজিদ চার হাজার বছরেরও বেশি পুরনো ইতিহাস ধারণ করে আছে। এখানে হজরত ইবরাহিম (আ.)-সহ তাঁর স্ত্রী সারা, পুত্র ইসহাক (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর সমাধি রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
ইতিহাসের গভীরে
৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম বাহিনীর ফিলিস্তিন বিজয়ের পর ১৫ হিজরিতে (৬৩৬ খ্রিস্টাব্দ) এই স্থানে প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়। উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসনামলে এটি মুসলিমদের ইবাদতের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তবে ক্রুসেডারদের হামলার পর (১০৯৯ খ্রিস্টাব্দ) প্রায় ৯০ বছর এটি গির্জা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
১১৮৭ সালে সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবি জেরুজালেম বিজয়ের পর ইবরাহিমি মসজিদ পুনরুদ্ধার করেন। তিনি মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১০টি পরিবারকে দায়িত্ব দেন এবং মিসরে নির্মিত একটি দৃষ্টিনন্দন মিম্বর স্থাপন করেন, যা আজও ইসলামি স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে টিকে আছে।
দখলদারিত্ব ও বেদনাদায়ক অধ্যায়
১৯৬৭ সালের ৪ জুন ইসরায়েলি বাহিনী হেবরন দখল করে মসজিদে নিজেদের পতাকা উড়ায়। এরপর থেকে মুসল্লিদের প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়। ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ্যায় লেখা হয় ১৯৯৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, যখন ইসরায়েলি সৈন্যরা জুমার নামাজরত মুসল্লিদের ওপর গুলি চালিয়ে ২৯ জনকে হত্যা করে এবং শতাধিককে আহত করে।
বর্তমান অবস্থা
আজও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ মসজিদের বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। মুসল্লিদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে নামাজ আদায় করতে হয়। অথচ এই স্থান কেবল মুসলিমদের জন্যই নয়, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের কাছেও পবিত্র।
ইবরাহিমি মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি ফিলিস্তিনি সংগ্রাম, ধর্মীয় সহিংসতা ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক। আজও বিশ্বের মুসলিমরা এই মসজিদের স্বাধীনতা ও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.