জাপানে দীর্ঘদিন ধরে একটি মেগা ভূমিকম্পের আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা প্রায় তিন লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটাতে পারে এবং দেশটির অর্থনীতিতে বিপুল ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। জাপান সরকার এক নতুন প্রতিবেদনে এই সম্ভাব্য দুর্যোগ সম্পর্কে সতর্ক করেছে।
সোমবার জাপানের মন্ত্রিপরিষদ অফিস থেকে প্রকাশিত হালনাগাদ মূল্যায়নে অনুমান করা হয়েছে যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে ভূমিকম্পের ফলে ২৭০ ট্রিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ১.৮১ ট্রিলিয়ন ডলার) ক্ষতি হতে পারে। পূর্ববর্তী অনুমানগুলোর তুলনায় এই ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।
জাপানের ভূমিকম্প গবেষণা প্যানেলের মতে, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে একটি মেগা ভূমিকম্পের সম্ভাবনা ৮০ শতাংশেরও বেশি।
‘মেগা কোয়াক’ বা ‘মেগা ভূমিকম্প’ হলো ৮ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প। এটি সাধারণ ভূমিকম্পের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ও বিধ্বংসী। বিশেষ করে যদি এটি ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বা ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে সংঘটিত হয়, তাহলে প্রাণহানি ও অবকাঠামোগত ক্ষতি মারাত্মক হতে পারে।
সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে বিশাল সুনামি সৃষ্টি হতে পারে এবং শত শত ভবন ধসে পড়তে পারে। এতে আনুমানিক ২ লাখ ৯৮ হাজার মানুষ মারা যেতে পারেন এবং ১২ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবেন, যা জাপানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ।
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত নানকাই খাদ প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ বছর অন্তর বড় ধরনের ভূমিকম্প সৃষ্টি করে। সর্বশেষ বড় ভূমিকম্পগুলো ১৯৪০-এর দশকে ঘটেছিল, এবং ভূকম্পবিদদের মতে, তখন থেকেই এই অঞ্চলে চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামীতে আরও বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দেয়।
২০১১ সালে উত্তর-পূর্ব জাপানে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার ফলে ভয়াবহ সুনামি হয় এবং ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়। একই সঙ্গে ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে চেরনোবিলের পর বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটে।
গত বছর জাপান নানকাই অঞ্চলে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্পের পর একটি মেগা ভূমিকম্পের ‘বেশি সম্ভাবনা’ সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছিল। জাপান সরকার এখনো ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, তবে এ ধরনের দুর্যোগের সম্পূর্ণ প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, জাপানের জনগণকে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, ভূমিকম্পপ্রতিরোধী অবকাঠামো ও উদ্ধার পরিকল্পনাগুলো আরও জোরদার করতে হবে।
সূত্র: রয়টার্স
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.