দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর হিজরি সনের দশম মাস তথা শাওয়াল মাসের এক তারিখে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। ঈদ শব্দটি আরবি, যার অর্থ আনন্দ। ফিতর শব্দটিও আরবি, যার অর্থ রোজা ভাঙা। তাই ঈদুল ফিতরের অর্থ হলো রোজা শেষ হওয়ার আনন্দ, আল্লাহর নিয়ামত লাভের আনন্দ ও উপবাস ভাঙার আনন্দ।
ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য সবচেয়ে আনন্দের দিন। এই দিনে একে অপরের ভেদাভেদ ভুলে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়। হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার, আত্মশ্লাঘা, রাগ-ক্রোধসহ যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে মুক্ত থাকার এক বিশেষ উপলক্ষ এই ঈদ।
এই মহিমান্বিত দিনে নবীজি (সা.)-এর কিছু সুন্নাহ অনুসরণ করলে ঈদের আনন্দ আরও পূর্ণতা পাবে। আসুন, সেগুলো জানার চেষ্টা করি।
ঈদের নামাজের জন্য মিসওয়াক করা ও গোসল করা সুন্নত। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে গোসল করতেন (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩১৫)।
ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার আগে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া সুন্নত। হযরত আনাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিছু খেজুর খেতেন। ভিন্ন এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৫৩)।
ঈদের দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পোশাক পরিধান করা সুন্নত। হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) প্রতিটি ঈদে ডোরাকাটা পোশাক পরিধান করতেন (বায়হাকি, হাদিস: ৬৩৬৩)।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার সময় নিম্নস্বরে তাকবির পাঠ করা সুন্নত। ইমাম জুহরি থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন তাকবির পাঠ করতে করতে ঈদগাহের দিকে গমন করতেন এবং নামাজের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখতেন (সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহিহা, হাদিস: ১৭১)।
ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং ভিন্ন রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরা সুন্নত। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) ঈদের দিন ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করতেন (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৮৬)।
অক্ষমতা না থাকলে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) হেঁটে ঈদগাহে যেতেন এবং হেঁটে ফিরে আসতেন (তিরমিজি, হাদিস: ১২৯৫)।
ঈদের দিনে একে অপরের সঙ্গে দেখা হলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। হাদিসে এসেছে, সাহাবিরা একে অপরকে বলতেন: "তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিংকুম" (আল্লাহ আমাদের এবং তোমাদের আমল কবুল করুন) (ফাতহুল কাদির: ২/৫১৭)।
ঈদের নামাজ শেষে খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা সুন্নত। আবদুল্লাহ বিন সায়েব (রা.) বলেন, নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে আমি ঈদের নামাজ আদায় করলাম। এরপর তিনি বলেন, ‘যার ইচ্ছা খুতবা শোনার জন্য বসতে পারে, আর যার ইচ্ছা চলে যেতে পারে’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১২৯৩)।
ঈদের দিনের এসব চমৎকার আমল আমাদের ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দেবে এবং হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেবে। আসুন, আমরা সবাই নবীজির সুন্নাহগুলো পালন করে ঈদের আনন্দকে দ্বিগুণ করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।
লেখক: শিক্ষার্থী, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.