সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে দুই ভারতীয় শিক্ষার্থীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রঞ্জিনী শ্রীনিবাসন এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো বদর খান সুরি-এর বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
৩৭ বছর বয়সী রঞ্জিনী শ্রীনিবাসন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবান প্ল্যানিং বিভাগের ছাত্রী। সম্প্রতি তার স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করে দিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ করা হচ্ছে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।
রঞ্জিনী অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, "আমি কোনো আন্দোলনে অংশ নিইনি। নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য আমি কানাডায় আশ্রয় নিয়েছি।"
মার্কিন নিরাপত্তা বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ক্রিস্টি নোয়েম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, "রঞ্জিনী সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল।"
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো বদর খান সুরি-কে মার্কিন প্রশাসন গ্রেফতার করেছে। তার স্ত্রী মার্কিন নাগরিক হলেও তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন গাজায়।
বদর খান সরাসরি ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। মার্কিন প্রশাসন তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আদালতের নির্দেশে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তিনি একটি ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক আছেন।
এতদিন বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য না করলেও, অবশেষে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন—
“ভিসা এবং অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিটি দেশের নিজস্ব আইন রয়েছে, যা তাদের সার্বভৌম বিষয়। বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের সে দেশের আইন মেনে চলতে হবে।”
তিনি আরও জানান, বদর খানের পরিবার বা মার্কিন প্রশাসন ভারতের দূতাবাসের সঙ্গে এখনও কোনো যোগাযোগ করেনি।
রঞ্জিনীর বিষয়ে তিনি বলেন, "ভারতের দূতাবাসের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগের তথ্য আমাদের কাছে নেই।"
দুই ভারতীয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে যা ঘটছে, তা নিয়ে ভারতের ভেতরেও বিতর্ক শুরু হয়েছে। সাধারণত বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের আইনি সমস্যায় ভারতীয় দূতাবাস সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
সম্প্রতি কাতারে এক ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড রোধে ভারত ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে দুই শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের জটিলতা এই বিষয়ে ভারতের ভূমিকা নির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে।
সাংবাদিক আশিস গুপ্ত জানিয়েছেন, ২ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারত কূটনৈতিক চ্যানেলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভারত চাইছে না যে, দুই শিক্ষার্থীর বিষয়টি বড় করে তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি হোক।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ডয়েচে ভেলে-কে জানান, "বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের কোনো আন্দোলনে অংশ না নিতে সতর্ক করা হচ্ছে।"
একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত পরিসরে সতর্ক পরামর্শ দিচ্ছে।
বিশেষ পরামর্শ: ছুটিতে কেউ যেন দেশে না ফেরেন।
কারণ: ফেরার পর আগের ভিসায় আবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন কি না, তা অনিশ্চিত।
শিকাগোর এক শিক্ষার্থীও জানিয়েছেন, "সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ খুব চাপপূর্ণ হয়ে উঠেছে।"
রঞ্জিনীর কানাডায় পালিয়ে যাওয়া এবং বদর খানের ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক থাকা—এই দুটি ঘটনা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ভারতীয় প্রশাসন এখনও কূটনৈতিকভাবে খুব বেশি সক্রিয় হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের সাম্প্রতিক উত্তেজনা বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখন নিজেদের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে। তবে এই ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসন ও ভারতীয় সরকারের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ কী হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.