আজ ১২ মার্চ, বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস। এ উপলক্ষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গ্লুকোমা বাংলাদেশ এবং বিশ্বজুড়ে অনিবারণযোগ্য অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। এবারের বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে— ‘এক সাথে হাত ধরি, গ্লুকোমা মুক্ত বিশ্ব গড়ি’।
গতকাল মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চোখের নীরব ঘাতক গ্লুকোমা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে আয়োজিত এক সমাবেশে র্যালি, সেমিনার, লিফলেট বিতরণসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ ২০২৫ (৯-১৫ মার্চ) উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গ্লুকোমার ভয়াবহতা এবং এর প্রতিরোধ ও চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সি-ব্লকের সামনে প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। র্যালির আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি বলেন, গ্লুকোমা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। শুরুতেই এই রোগ চিহ্নিত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সচেতনতার মাধ্যমে রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, বিএসএমএমইউকে চোখের নীরব ঘাতক গ্লুকোমা চিকিৎসায় রোল মডেল হতে হবে। চোখের চিকিৎসায় এভিডেন্স বেইসড মেডিসিনকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং গাইডলাইন অনুসরণ করে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস উপলক্ষে জানানো হয়, গ্লুকোমা চোখের এমন একটি রোগ, যাতে চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে চোখের পেছনের স্নায়ু অকার্যকর হয়ে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। গ্লুকোমা বাংলাদেশ তথা বিশ্বে অনিবারণযোগ্য অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ।
এই রোগ যেকোনো বয়সে হতে পারে। জন্মের সময় বড় চোখ এবং চোখের চাপ নিয়ে জন্মালে তাকে কনজেনিটাল গ্লুকোমা বলে। তরুণ বয়সেও গ্লুকোমা হতে পারে, যাকে জুভেনাইল গ্লুকোমা বলা হয়। তবে বেশিরভাগ গ্লুকোমা রোগ ৪০ বছরের পর দেখা দেয়, যাকে প্রাথমিক গ্লুকোমা বলা হয়।
এছাড়াও পারিবারিকভাবে যাদের গ্লুকোমা রোগের ইতিহাস আছে, যারা মাইনাস পাওয়ার চশমা পরেন, যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের মধ্যে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বেশি বয়সজনিত চোখের গঠনে পরিবর্তন, জন্মগত গঠনের ক্রটি, আঘাত, চোখ লাল হওয়া, ডায়াবেটিসজনিত চোখের রক্তহীনতা, অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড বা হরমোন থেরাপি, ছানি পেকে যাওয়া ইত্যাদি কারণে গ্লুকোমা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এই রোগ প্রতিরোধে করণীয় হলো পারিবারিকভাবে যাদের গ্লুকোমা রোগের ইতিহাস আছে, তাদের নিয়মিত চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চোখ পরীক্ষা করতে হবে। অল্প আলোতে কারো চোখে অস্বস্তি এবং মাথাব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। চোখে ছানি পড়লে তা পেকে যাওয়ার আগে অপারেশন করিয়ে নেওয়া ভালো। চোখে প্রদাহ হলে সেটা গ্লুকোমায় রূপ নেওয়ার আগেই চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। চোখে আঘাতের পর দেরি না করে চিকিৎসা করাতে হবে।
জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তন যেমন পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, লবণ জাতীয় খাবার বর্জন, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গ্লুকোমা রোগের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
বিএসএমএমইউর চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অপথালমোলজি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্টার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শওকত কবীর, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জাফর খালেদ, বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. সিদ্দিকুর রহমানসহ চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টরা।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.