ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে নিবন্ধিত প্রায় পৌনে চার লাখ মানুষের মধ্যে এই কর্মসূচির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটিকে অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আরও আকর্ষণীয় করার প্রতিশ্রুতি দিলেও মানুষের আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি।
নিবন্ধিত অনেকেই নিয়মিত কিস্তির টাকা জমা দিচ্ছেন না। গত ছয় মাসে নতুন নিবন্ধনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার একটি কলেজের প্রভাষক নাসিমা আক্তার নূপুর বলেন, “ছয়-সাত মাস আগে প্রথম কিস্তিতে ৫০০ টাকা দিয়েছিলাম, এরপর আর কোনো টাকা জমা দেইনি।”
তার মতো আরও অনেকে জানান, তারা মূলত ওপর মহলের চাপে পড়ে নিবন্ধন করেছিলেন, তবে কর্মসূচির স্থায়িত্ব ও অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা না থাকায় কিস্তি পরিশোধে তারা আগ্রহী নন। এছাড়া, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতা তাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মতে, প্রচারণার অভাবের কারণে নতুন নিবন্ধনের হার কমে গেছে। পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা জানান, সরকার পতনের আগে নিবন্ধন বেশি থাকলেও পরে গতি কমেছে। তবে সরকার ইতোমধ্যে কর্মসূচিকে আরও আকর্ষণীয় করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
সরকার বর্তমানে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে কর্মসূচির প্রচারণা চালাচ্ছে, যার মধ্যে টেলিভিশন, সংবাদপত্র এবং মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ে মেলা আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকার সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, সমস্যাটি সুযোগ-সুবিধার ঘাটতিতে নয়, বরং অর্থ ব্যবস্থাপনা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দুর্বলতায়।
তিনি বলেন, “আমি যে টাকা জমা দেবো, সেটি সরকার কীভাবে পরিচালনা করবে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। পেনশন কর্তৃপক্ষ সরকারের অধীনে থাকায়, বাজেট ব্যবহারের প্রয়োজনে এই তহবিল থেকে অর্থ নেওয়ার আশঙ্কা থাকে।”
এছাড়া, দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপক এবং স্বাধীন পরিচালন ব্যাবস্থা ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা কঠিন হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মতে, সর্বজনীন পেনশন তহবিল থেকে কোনো অর্থ বাজেটে ব্যবহৃত হবে না এবং এটি শুধুমাত্র বিনিয়োগের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
পেনশন কর্তৃপক্ষের মোস্তফা বলেন, “গ্রাহকের অর্থ একটি ডেডিকেটেড ফান্ডে সংরক্ষিত থাকে এবং এটি শুধুমাত্র বিনিয়োগ করা হয়। এখানে সন্দেহের কিছু নেই।”
২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশনের চারটি স্কিম (সমতা, সুরক্ষা, প্রগতি ও প্রবাস) চালু করা হয়। ২০২৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এই কর্মসূচির দেড় বছর পূর্তি হবে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আপাতত এই চারটি স্কিম চালু থাকবে, তবে ভবিষ্যতে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন স্কিম সংযোজন হতে পারে।
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত, তবে সরকার এটিকে অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মানুষের আস্থাহীনতা, অর্থ ব্যবস্থাপনার প্রশ্ন এবং প্রচারণার অভাব কাটিয়ে উঠতে না পারলে এই কর্মসূচি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে কি না, সেটি এখনো প্রশ্নসাপেক্ষ
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.