গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর রয়েছে। এর আওতায় এখন পর্যন্ত মোট ছয় দফায় ১৯ জন ইসরাইলি ও ৯৩৫ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার পরও ইসরাইল দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি আল-জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা সানাদ-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ইসরাইলি বাহিনী শহরটির বহু বাড়িঘর ধ্বংস করেছে।
রাফাহ ক্রসিং দীর্ঘদিন ধরে গাজা ও মিশরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে ২০২৪ সালের মে মাসে ইসরাইল এটি বন্ধ করে দেয়।
১৯৭৯ সালের মিশর-ইসরাইল শান্তিচুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরাইল এখন রাফাহ সীমান্তে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে এবং ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ফিলাডেলফি করিডোর এলাকায় খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি এই করিডোরের দখল ধরে রাখার ওপর জোর দিয়েছেন, যদিও এটি আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ।
সানাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ১৯ থেকে ২১ জানুয়ারির মধ্যে নেওয়া স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে—
ইসরাইলি বাহিনী রাফাহ শহরের হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে তাদের নিজ বাড়িতে ফিরতে বাধা দিচ্ছে। এমনকি যারা বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছে, তাদের ওপর সামরিক যান থেকে গুলি চালানো হচ্ছে, যাতে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ৫০ দিনের মধ্যে ইসরাইলকে ওই অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করার কথা ছিল। কিন্তু স্যাটেলাইট চিত্রের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইসরাইলি বাহিনী সেখানে স্থাপনা ও বসতি নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
রাফাহ শহরের আস-সালাম, ইদারি ও তেল জাআরাব এলাকায় ৬৪টি ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শহরের পশ্চিম অংশে তাল আস-সুলতান এলাকায় অন্তত ৬টি বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে, যা মিশরীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৭৫০ মিটার দূরে অবস্থিত।
ফিলিস্তিনি প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক হামজা আত্তার বলেন,
“এটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ। কারণ তারা আবাসিক ভবনগুলো ধ্বংস করছে এবং সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে।”
চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরাইলি হামলা, অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ বা পূর্বের আঘাতের কারণে কমপক্ষে ১১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার পরও ইসরাইল গাজার জন্য পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
রাফাহ শহরের মেয়র আহমেদ আল-সুফি জানিয়েছেন, শহরের অধিকাংশ বাসিন্দাই বাস্তুচ্যুত অবস্থায় রয়েছে। আনুমানিক ২ লাখ মানুষ এখন আল-মাওয়াসি, খান ইউনিস ও গাজার অন্যান্য এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু তাদের নিজ বাড়িতে ফেরার কোনো সুযোগ নেই।
প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, রাফাহ শহরের ৯০% বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রায় ৫২,০০০ বসতবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতেও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বাহিনী সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও হামলার হুমকি দিচ্ছেন।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.