সম্প্রতি পানামা খালের ওপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও বিশ্লেষকদের মতে, এতে বড় ধরনের শিপিং বিঘ্নিত হবে না, তবে এটি লাতিন আমেরিকায় চীনা বিনিয়োগের জন্য একটি সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখা যেতে পারে।
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারির উদ্বোধনী ভাষণে দাবি করেছিলেন, ‘চীন পানামা খাল পরিচালনা করছে।’ তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি মূলত ১৯৯৭ সাল থেকে হংকং-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হাচিসন পোর্টস পরিচালিত বন্দরের প্রতি ইঙ্গিত। আন্তর্জাতিক আলোচনায় কোম্পানিটির ভূমিকা নতুন হলেও এর রাজনৈতিক প্রভাব উল্লেখযোগ্য নয়।
শিপিং গবেষণা প্রতিষ্ঠান বানচেরো কোস্টা-এর গবেষণা প্রধান র্যালফ লেসজিনস্কি বলেছেন, ‘এটি বরাবরই একটি বাণিজ্যিক উদ্যোগ ছিল, যার রাজনৈতিক কোনো অর্থ বা প্রভাব ছিল না।’
পানামা খাল যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ও পূর্ব উপকূলের মধ্যে সংক্ষিপ্ততম শিপিং রুট এবং এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বের বৃহত্তম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এই খালের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। পানামা খালের মোট পণ্য পরিবহনের প্রায় ৭৫ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের গন্তব্যে যায় বা সেখান থেকে আসে।
লেসজিনস্কি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ নিশ্চিত করা যে তাদের এলএনজি ও এলপিজি রপ্তানি বাধাহীন ও সাশ্রয়ী মূল্যে খাল অতিক্রম করতে পারে।’
চীনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রচার কাউন্সিলের সাবেক প্রতিনিধি আন দালি মনে করেন, ‘পানামা খাল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘বন্দরের অপারেটররা শুধুমাত্র নিজস্ব টার্মিনালের জাহাজ পরিচালনা করেন, কিন্তু পানামা খালের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলে তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’ তবে, জরুরি পরিস্থিতিতে কার্যক্রম বন্ধ হলে এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
২৮ জানুয়ারির এক মার্কিন কংগ্রেস শুনানিতে কয়েকজন সিনেটর আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ‘দক্ষিণ চীন সাগরে সংঘাত হলে চীন-নিয়ন্ত্রিত বন্দরগুলো মার্কিন নৌবাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।’
আন দালি আরও বলেন, ‘পানামা খাল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ পেরুর চানকাই বন্দরে চীনা বিনিয়োগের বিরুদ্ধে মার্কিন সমালোচনার মতোই।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পানামা সফরকালে চীনের প্রভাব কমানোর জন্য ‘তাৎক্ষণিক পরিবর্তনের’ আহ্বান জানান। এরপরই পানামা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) থেকে বেরিয়ে আসে এবং হাচিসন পোর্টস পরিচালিত বন্দরের কার্যক্রম পর্যালোচনা শুরু করে।
এর ফলে পানামায় চীনের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্প অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
হাচিসন পোর্টস হংকংয়ের ধনকুবের লি কা-শিং-এর মালিকানাধীন সি.কে. হাচিসন হোল্ডিংস-এর অংশ। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ২৪টি দেশে ৫৩টি বন্দর পরিচালনা করছে, যার মধ্যে ইউরোপের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরও রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি যুক্তরাষ্ট্র তার ‘মনরো নীতি’ পুনরায় কার্যকর করে (যেখানে পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ), তাহলে এই উত্তেজনা চীনের লাতিন আমেরিকায় বিনিয়োগের জন্য একটি সতর্ক সংকেত হতে পারে।
কারণ, শিল্প-কারখানা ও অবকাঠামোগত প্রকল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ প্রয়োজন হয় এবং বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারে সময় লাগে। তাই চীনের জন্য বিদেশে তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.