টানা তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুতই শেষ হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে ইতোমধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে। নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের শুরুর পর এই প্রথমবারের মতো মার্কিন ও রুশ দুই নেতার মধ্যে সরাসরি টেলিফোনে কথা হয়েছে।
এয়ারফোর্স ওয়ানে নিউইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প তার ও পুতিনের মধ্যকার ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে তিনি কতবার পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান। ট্রাম্প বলেন, "মানুষের মৃত্যু থেমে যাক, পুতিনও সেটাই চান।"
হোয়াইট হাউসের কাছে ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাস নিউজ এজেন্সিকে জানান, "বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ চলছে, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এ সম্পর্কে কিছু জানি না এবং এটি নিশ্চিত বা অস্বীকার করতে পারছি না।"
আগামী সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন ট্রাম্প। তবে বৈঠকটি সরাসরি নাকি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হবে, সে বিষয়ে তিনি পরিষ্কার করেননি। তিনি আবারও পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের খনিজসম্পদের ভাগ চাওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে খনিজসম্পদ দিতে রাজি, তবে বিনিময়ে ওয়াশিংটনকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ অনুযায়ী রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধেও তিনি সম্মত হতে পারেন।
শুক্রবার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি একটি গোপন মানচিত্র দেখান, যেখানে ইউক্রেনের বিরল মৃত্তিকা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজের বিশাল মজুত চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জেলেনস্কির এই কৌশল মূলত ট্রাম্পের ব্যবসায়িক মনোভাবকে আকর্ষণ করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
জেলেনস্কি দাবি করেছেন, ইউক্রেনে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাইটানিয়ামের মজুত রয়েছে, যা বিমান ও মহাকাশ শিল্পে অপরিহার্য। এছাড়া পারমাণবিক শক্তি ও অস্ত্র উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত ইউরেনিয়ামেরও বিশাল মজুত রয়েছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ইউক্রেন তার সম্পদ অন্যদের হাতে তুলে দিতে চায় না, বরং পারস্পরিক সুবিধাজনক অংশীদারত্বের মাধ্যমে এই সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ দিতে চায়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আগামী ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে পশ্চিমা দেশগুলোর কর্মকর্তারা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করবেন। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন এবং সেখানে ট্রাম্পের বিশেষ দূত কিথ কেলোগও উপস্থিত থাকবেন।
জেলেনস্কি বলেন, "ট্রাম্পের সঙ্গে আমার সরাসরি সাক্ষাৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি প্রথমে পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন। অন্যথায়, এটি ইউক্রেন ছাড়া ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি সংলাপে পরিণত হবে।"
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.