আসন্ন রমজানে বাজারে স্বস্তি ফেরাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। রমজানের চাহিদা মাথায় রেখে চিনি, ছোলা, ডাল, তেল ও খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যের যথেষ্ট আমদানি করা হয়েছে। এই খবরটি স্বস্তির হলেও, এর মধ্যে হঠাৎ করেই রাজধানীর বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমে গেছে। সব দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আশার কথা, শীতের শেষ সময়ে এসেও সবজির বাজারে স্বস্তি রয়েছে।
ভোজ্যতেলের বিষয়ে বিক্রেতারা জানান, সরবরাহকারী ভ্যান এলেও তারা তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। প্রতিদিন যা সরবরাহ করা হয়, তা একদিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে শীতকালীন সবজির প্রচুর সরবরাহের কারণে ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজারের বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ১৭৫ টাকা দামের এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। দু'একটি দোকানে থাকলেও তা গোপনে রাখা হচ্ছে। লিটারে বাড়তি ১৫ থেকে ২৫ টাকা পেলে দোকানিরা গোপনে বিক্রি করছেন। তবে বড় দোকানগুলোতে দুই লিটারের বোতল ৩৫০ টাকা, আর পাঁচ লিটারের বোতল ৮৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
হঠাৎ সয়াবিন তেল উধাও কেন? জানতে চাইলে মিরপুর-১০ সেনপাড়ার বিক্রেতা জাকির হোসেন জানান, আগস্ট থেকেই এ অবস্থা। ডিলাররা প্রয়োজন মতো তেল সরবরাহ করছেন না। বোতলের তেল শেষ হলে ১৭০ টাকায় পামওয়েল বিক্রি করছেন।
শীতকালীন সবজির বাড়তি সরবরাহের সুবাদে রাজধানীর বাজারে এখনো এসব পণ্যের দাম স্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছে। সস্তায় মিলছে গোল আলু, কেজি ২০ টাকা, পেঁয়াজের কেজি এখনো ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ভালো মানের গোল বেগুন পাওয়া যাচ্ছে ৬০ টাকায়, মাঝারি মানের বেগুনের কেজি ৫০ টাকায়, আর লম্বা বেগুন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের কেজি ৮০ টাকা, টমেটো পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকায়। দেশি শসার কেজি ৮০ টাকা, হাইব্রিড ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ক্ষিরা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২৫০ গ্রাম ধনেপাতার দাম ২৫ টাকা, গাজরের কেজি ৪০ টাকা, বড় ধরনের প্রতিটি লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ৩৫-৪০ টাকা, বিচিসহ শিম ৫০-৬০ টাকা, কলার হালি ৩০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, করলা ১৪০ টাকা, উস্তার কেজি ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, চিচিঙ্গার কেজি ৬০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, ঢেঁড়শের কেজি ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকায় এবং বড় আকারের লেবু ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউপাতা ২০ টাকা। ফুলকপি ২৫ টাকায় এবং বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজারে স্বস্তি থাকলেও চালের বাজারে অস্বস্তি যাচ্ছে না। সব ধরনের চালে ঊর্ধ্বগতি। চিকন চাল ৮২ থেকে ৮৫ টাকা, বিআর-আটাশ ৬৫ টাকা, মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা রাখা হচ্ছে।
এদিকে ছোলার কেজি ১১০ টাকা, ছোলার ডাল ১২৫ টাকা, মোটা ডাল ১১০, চিকন ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, চিনির কেজি ১২৫ টাকা, ডিমের ডজন ১৩০-১৩৫ টাকা রাখা হচ্ছে। হাতে ভাজা মুড়ির কেজি ১৬০ টাকা। বেসনের কেজি ১২০ টাকা, তবে কারওয়ান বাজারের মতো পাইকারি বাজারে ২০ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
গরু-খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। গরুর মাংসের কেজি ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ১২০ টাকা, ছাগলের মাংস ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে দাম স্থিতিশীল, তবে ইলিশের দাম কিছুটা বেশি। এক কেজি থেকে বেশি ওজনের ইলিশের দাম ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, আর ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা।
ফলের বাজারে দাম বেড়েছে। নাশপাতি ৩৮০ টাকা, মালটা ৩০০ টাকা, কমলা ২৮০ টাকা, আপেল ২৮০ টাকা, গোল্ডেন আপেল ৩৮০ টাকা, আঙুর ৩০০ টাকা, লাল আঙুর ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, ভ্যাট বাড়ানোর ফলে সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে।
রোজায় প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ সম্পর্কে পাইকাররা জানান, চিনি, ডাল, ছোলা, ছোলার ডাল এখনও যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে। পাইকারি বাজারে চিনির বস্তার দাম ৫ হাজার ৭৫০ থেকে ৫ হাজার ৮০০ টাকা, এবং মসুর ডালের দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা। ছোলার বস্তার দাম ২ হাজার ৫৫০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা।
রোজায় চাহিদা বেশি এমন পণ্যের দাম কিছুটা বাড়লেও, সরকারের নানা পদক্ষেপের ফলে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.